রিমা দে (বাঁ দিকে) এবং মিঠু রক্ষিত (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বুথ একই। দুই প্রার্থীরই প্রতীক এক— ঘাসের উপর জোড়া ফুল। দুই প্রার্থী বলছেন, তাঁরা তৃণমূল। কিন্তু একই বুথে একই দলের হয়ে কী ভাবে পঞ্চায়েত ভোটে দু’জন লড়ছেন? নির্বাচন কমিশনের নথিতে ‘ডবল সিটেড কনস্টিটিউয়েন্সি’ নামেই এমন বুথের পরিচিতি। ‘অবাক করা’ এমন বুথেই ভোট দেবেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সাতটি পাড়ার ১,৩০০-র বেশি ভোটার। ‘ওজনদার’ দুই প্রার্থী রিমা দে এবং মিঠু রক্ষিত লড়ছেন তৃণমূলের হয়ে। জয়ের ব্যাপারেও সমান আত্মবিশ্বাসী তাঁরা। শনিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার ৩,৯৩৩ টি বুথে হবে ভোটগ্রহণ। তার মধ্যে এমন অনেক বুথে রয়েছে, যার কোনওটাতে আলাদা আলাদা দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন বৌমা এবং শাশুড়ি। আবার কোনও বুথে ভোটের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন মামা-ভাগ্নে। সেই রকম নজরকাড়া বুথ হল জেলার জামালপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথ। ‘ডি-লিমিটেশন’ প্রক্রিয়ার দৌলতে গোটা জেলায় ‘ডবল সিটেড কনস্টিটিউয়েন্সি’ বুথের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৩টি। তার মধ্যে অন্যতম হল জামালপুরের ১৩৯ নম্বর বুথ। এই বুথে বিরোধী দলের যেমন দু’জন করে প্রার্থী রয়েছেন, তেমনই শাসকদলের দু’জন প্রার্থী রয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ‘‘লড়াইটা মূলত দুই তৃণমূলীর।’’ দলের কর্মীরা রসিকতার সুরে বলছেন,‘‘ওই বুথ আমাদের একই ফুল, মালকিন দু’জন।’’ তবে বুথের ভোটাররা ঘাসফুল প্রতীকের প্রার্থীদের প্রতি আস্থা রাখেন, না কি কাস্তে-হাতুড়ির প্রতি, সেটা ১১ জুলাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
তৃণমূলের দুই প্রার্থীর বাড়ি পাশাপাশি। তাঁদের কথায়, ‘‘আমাদের বুথ ব্যতিক্রমী বুথ। ‘ডি-লিমিটেশন’-এর জাঁতাকলে পড়ে যাওয়ায় তাঁদের দু’জনকে একই বুথের প্রার্থী হয়ে লড়তে হচ্ছে।’’ তৃণমূলের প্রার্থীদের এমন দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে ওই বুথের সিপিএম প্রার্থী দেবিকা দেবনাথ ও পরিতোষ সিংহ বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রার্থীরা দিবা স্বপ্ন দেখছেন।’’ জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘‘জনসংখ্যার নিরিখে বুথ নির্দিষ্ট করার সময় এমন বুথের অস্তিত্ব তৈরি হয়। ‘ডি-লিমিটেশন’-এর ফলে সব বিধানসভা এলাকাতেই এমন বুথ রয়েছে। তবে তার সংখ্যা হাতে গোনা। জামালপুর বিধানসভা এলাকায় ‘ডাবল সিটেড কনস্টিটিউয়েন্সি’ বুথ রয়েছে ১৬টি। এমন বুথে শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে একটি ব্যালটের দু’ পাশে একই দলের দু’জন করে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকেন। ভোটাররা তাঁদের পছন্দ মতো একই দলের দুই প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। আবার আলাদা আলাদা দলের থেকেও এক এক জন করে প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। তবে এই রকম বুথে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনের জন্য নির্দিষ্ট ব্যালটে এমনটা হয় না। তাতে যে কোনও দলের একজন করে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকে।’’