তল্লাশি চালানো হচ্ছে মায়াপুরের গঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুর-ফরিদপুর থেকে মায়াপুরে বেড়াতে গিয়ে গঙ্গায় তলিয়ে গেল দুই কিশোর। বৃহস্পতিবার দুর্যোগের সকালে ঘটনাটি ঘটে। নিখোঁজ বছর পনেরোর বিপিন ভগত ও বছর এগারোর সোনু ভগত সম্পর্কে তুতো ভাই। রাত পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি।
নদিয়ার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অণ্ডাল থেকে একটি ছোট গাড়িতে করে জনা আটেক নদিয়ার মায়াপুরে বেড়াতে এসেছিলেন। ভোরে বেরিয়ে সকাল ৮টা নাগাদ তাঁরা মায়াপুরে পৌঁছন। অতিথি আবাস বা হোটেলে না উঠে প্রথমেই তাঁরা চলে যান গঙ্গায় একাদশীর স্নান সারতে। মায়াপুরের গৌর গোপীনাথ মন্দির সংলগ্ন গঙ্গার ঘাটে তাঁদের কয়েক জন স্নানে নামেন। দলের সদস্যেরা জানান, বড়রা যখন স্নানে ব্যস্ত সেই ফাঁকে বিপিন এবং সোনু কখন জলে নেমে পড়েছে তা কেউ খেয়াল করেননি। এমনিতে এই সময়ে ভরা গঙ্গা। তার উপরে বৃষ্টি হচ্ছিল। ঘাটে লোকজনও কম ছিল।
ঘটনাটি যখন ঘটে তখন ওই ঘাটে স্নান করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সুলতা সেন। তিনিই খেয়াল করেন, দুই কিশোর ভেসে যাচ্ছে। তাঁর চিৎকারে ভগত পরিবারের লোকজনের হুঁশ ফেরে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা হতচকিত হয়ে পড়েন। সুলতা একটি কাপড় দুই কিশোরের দিকে ছুড়ে দিলেও তারা তা ধরতে পারেনি। হইচই শুনে আশপাশ থেকে বৃন্দা সাহা, নাড়ুগোপাল সেনরা ছুটে আসেন। নাড়ুগোপাল জানান, তিনি জলে ঝাঁপিয়েও ছেলে দু’টির নাগাল পাননি।
বিপিনের বাবা বাবন ভগত অণ্ডালের শ্যামসুন্দরপুর কোলিয়ারির কর্মী। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের সরপি কোলিয়ারি আবাসনে থাকেন তাঁরা। বিপিন দশম শ্রেণির ছাত্র। বাবনবাবু জানান, ভাই পিন্টু ও তাঁর পরিবারের সবাই মায়াপুরে বেড়াতে গেলেও তিনি যাননি। এ দিন সকালে ফোনে এই দুর্ঘটনার খবর পেয়েই পাড়ার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মায়াপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সোনুর বাবা পিন্টুবাবু বলেন, “আমার স্ত্রী এবং অন্যেরা স্নান সেরে উঠছিল। তখনই ওরা দু’জন কাউকে না বলে জলে নেমে যায়।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে মায়াপুর ফাঁড়ির পুলিশ। কিন্তু ডুবুরি আনতে কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। অপেক্ষা করতে-করতে বিরক্ত হয়ে যান বাড়ির লোকজন। সোনুর দিদি পূজা ভগত বলেন, “ডুবুরি আনতে কতক্ষণ লাগবে জানি না। পুলিশকে যখনই জিজ্ঞাসা করছি, ওঁরা শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন।” শেষে দুপুর ২টো নাগাদ ডুবুরি নামিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। রাত পর্যন্ত দুই কিশোরের হদিস মেলেনি। ফরিদপুরের জেলা পরিষদ সদস্য সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ওঁদের পাশে আছি।’’