এই দাঁতালটিকে আসানসোলে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা হয়। পরে ছেড়ে দেওয়া হয় বান্দোয়ানের জঙ্গলে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
টানা ১৬ ঘণ্টার কসরত। শেষমেশ ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে মঙ্গলবার দিনভর তাণ্ডব চালানো দাঁতালটিকে অচেতন করে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জঙ্গলে পাঠানোর কথা জানাল বন দফতর।
বন দফতর জানায়, মঙ্গলবার ভোরে দাঁতালটি কালাঝরিয়ার অলকা বাউড়িকে (৬৫) পিষে মারে। সন্ধ্যার পরে, হুলা পার্টি দাঁতালটিকে দামোদর পার করানোর চেষ্টা শুরু করে। সেটি প্রথমে দামোদরের দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু সেখানে বহু মানুষের ভিড় দেখে উল্টো দিকে ঘুরে তালকুড়ি গ্রামে ঢোকে দাঁতালটি। সেখানে যাওয়ার সময়ে চাষাপট্টির বাসিন্দা রামু যাদবকে (৪২) পিষে মারে। দাঁতালটিকে দেখে লোকজন চম্পট দিতে গেলে পড়ে চোট পান অনেকেই। দাঁতালটি ইসমাইলের মাঠ পেরিয়ে সোজা মহিশীলা কলোনিতে ঢুকে পড়ে। আসানসোল পুরসভার ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডের সানভিউ পার্ক এলাকার আশপাশে ছোটাছুটি শুরু করে দাঁতালটি।
দাঁতালের কাণ্ড দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে প্রচুর পুলিশকর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সায়ক দাস। বনকর্মীরা তখন জানান, পূর্ণবয়স্ক হাতিটি মহিশীলা থেকে বেরিয়ে এসবি গড়াই রোডে গিয়ে পড়লে বিপদের শেষ থাকবে না। কারণ, মঙ্গলবার সরস্বতী পুজোর কেনাকাটা করতে তখন গড়াই রোডে ভিড় জমেছিল। ডিএফও (দুর্গাপুর) মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘পরিস্থিতির বিচারে আমরা হুলা পার্টি দিয়ে তাড়ানোর পরিবর্তে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে হাতিটিকে কাবু করি।’’ রাত ৯টা নাগাদ প্রথমে গুলি ছোড়া হয়। আধ ঘণ্টার মধ্যে আরও দু’টি গুলি করা হয়।
বন দফতর জানায়, প্রথম গুলিটি খেয়ে দাঁতালটি এক জায়গায় থমকে দাঁড়ায়। কিছুটা ধাতস্থ হতেই ফের ধীর পায়ে চলতে শুরু করে। কিন্তু তার পরে দু’টি গুলি খেয়ে সেটি একটি ডোবায় পড়ে যায়। সেটিকে বেঁধে ক্রেনের সাহায্যে একটি দশ চাকা ট্রাকে তুলে রাত দেড়টা নাগাদ পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে পাঠানো হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বান্দোয়ানে ময়ূরঝর্না হস্তি প্রকল্পের জঙ্গলে দাঁতালটিকে ছাড়া হয়। যমুনা বনাঞ্চলের লটঝর্না গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয় সেটিকে। ট্রাক থেকে ক্রেনের সাহায্যে নামানোর পরেই একটু একটু করে ঘোর কাটে হাতিটির। কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠে পড়ে সেটি জঙ্গলের পথ ধরে। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের লাকাইসিনির দিকে দাঁতালটি চলে গিয়েছে বলে বন দফতর জানায়। আসানসোলে হস্তি-কাণ্ডের তদারকি করেন মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পূর্ব) কল্যাণ দাস। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত হাতিটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা খুব জরুরি। বনকর্মীরা সেটাই করছেন।’’
দাঁতালটিকে এলাকাছাড়া করার পরেও স্থানীয় বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বাউড়ি বলেন, ‘‘বিশ্বাস নেই। আবার কখন দাঁতাল ঢুকে পড়ে।’’ অন্য এক বাসিন্দা নমিতা বাউড়ি বলেন, ‘‘গ্রামের প্রায় শেষ প্রান্তে আমাদের বাড়ি। পাশেই জঙ্গল। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে সবসময় দাঁতাল-দৌরাত্ম্যের ভয় পেয়ে বসেছে।’’