Truck

ঘরে বালির  ট্রাক, মৃত তিন 

মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপরে মাধবডিহি থানা এলাকার বৈধ বালিঘাট থেকে বালি তুলে, বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক ঢুকে পড়ে রাস্তার ধারে সন্ধ্যাদেবীদের এক কামরার বাড়িতে। সেখানেই সেটি উল্টে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামালপুর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০২:০৭
Share:

বৌমা, নাতি-নাতনিকে হারিয়ে কান্না । ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী

গ্রামের রাস্তা দিয়ে নির্দিষ্ট বহনক্ষমতার বেশি মাল নিয়ে ট্রাক যাবে না—বৃহস্পতিবারেও প্রশাসনিক বৈঠকে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, সে রাতেই তেমন এক বালি বোঝাই ট্রাক বাড়িতে ঢুকে পিষে দেয় মা ও দুই সন্তানকে। বালিচাপাও পড়েন তাঁরা। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মুইদিপুর গ্রামে ওই ঘটনার জেরে আগুন লাগানো হয় বালি খাদানের অফিসে, ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়িতে। জখম হন জামালপুর থানার তিন পুলিশকর্মী।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন সন্ধ্যা বাউরি (৩০), তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী রিঙ্কু (১৫) ও ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাহুল (১২)। ট্রাকচালক পলাতক। খালাসিকে আটক করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামীণ রাস্তায় বালিবোঝাই ট্রাক চলাচল নিয়ে কী করা যায়, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা হচ্ছে।’’

মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপরে মাধবডিহি থানা এলাকার বৈধ বালিঘাট থেকে বালি তুলে, বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক ঢুকে পড়ে রাস্তার ধারে সন্ধ্যাদেবীদের এক কামরার বাড়িতে। সেখানেই সেটি উল্টে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যাদেবীর স্বামী প্রশান্তবাবু ঘটনার সময়ে ঘরে ছিলেন না। কাছাকাছি দুর্গামন্দিরে বসেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পৌনে ৯টা নাগাদ হঠাৎ জোরে আওয়াজ হয়। ছুটতে ছুটতে রাস্তায় গিয়ে দেখি, আমার বাড়ির ভিতরে ট্রাক ঢুকে গিয়েছে। কাছে গিয়ে দেখি, পুরো বাড়িটা বালি চাপা পড়েছে। সব শেষ হয়ে গেল আমার।’’ তাঁর মা আলোচনা বাউরি বলেন, ‘‘পাশের বাড়িতে শুতে যাই। বিকট আওয়াজ শুনে এসে দেখি, শুধুই বালি! বহু হাতড়েও কাউকে পেলাম না!’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রায় ২৫ ফুট মতো ছেঁচড়ে গিয়ে ট্রাকটি প্রশান্তবাবুদের বাড়িতে ধাক্কা মারে। শুক্রবার সকালেও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পিচ রাস্তায় বড় ফাটল রয়েছে।

Advertisement

প্রশান্তবাবুর ভাই সুশান্ত বাউরি বলেন, ‘‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পাশের ঘরে বৌ যশোদা ছেলেদের নিয়ে ছিল। জোর আওয়াজে ঘুম ভেঙে দেখি, সব অন্ধকার। পড়শিরাই আমাদের ঘর থেকে বার করেন।’’

পুলিশ পৌঁছে সন্ধ্যাদেবীর দেহ উদ্ধার করতে পারলেও নাবালক দু’জনের দেহ নিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। তা চলে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। বালি সরানোয় তৎপরতার অভাবের অভিযোগে হামলা হয় পুলিশকর্মীদের উপরে। গ্রামবাসীর দাবি, বালি সরানোর জন্য গ্রামের সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অভিযোগ, পুলিশকর্মীরা এগিয়ে না আসায় তাঁদের তাড়া করেন কয়েকজন। ক্ষোভের মাঝে পড়ে পুলিশকর্মীরা জখম হন। এর পরেই খাদান-অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক, অস্থায়ী হোটেল, অফিস ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে বর্ধমান পুলিশ লাইন-সহ মেমারি, রায়না, মাধবডিহি থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার একাংশ মানুষের দাবি, পুলিশ ব্যবস্থা নিলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি বালি সরিয়ে মৃতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেত।

পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেননি রাতভর ঘটনাস্থলে থাকা এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, “মুণ্ডেশ্বরীতে বালি খাদান বন্ধ করার দাবিতে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। আমরা এলাকার পরিস্থিতি, সমস্যা ও সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে জেলাশাসককে চিঠি লিখব।’’

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, ‘‘বালি ওভারলোড করা ট্রাকগুলো গেলেই ঘর-বাড়ি কাঁপে। দুর্ঘটনাও ঘটেছে আগে।’’ যদিও বালি খাদান কর্তৃপক্ষের দাবি, বিধি মেনে চলা হয়। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (বর্ধমান সদর) সুনীল গুপ্তের অভিযোগ, “শাসক দলের প্রশ্রয়ে একটা চক্র তৈরি হয়েছে। তার জেরে কখনও গলসি, কখনও জামালপুরে গরিব মানুষদের প্রাণ যাচ্ছে।’’ যদিও অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের দাবি, “আমরা বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সব সময়ই সরব।’’ এ দিন বিকেলে সন্ধ্যাদেবীর স্বামী প্রশান্তবাবুর হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “গ্রামীণ রাস্তায় ভারী গাড়ি চলাচল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে বার্তা দিয়েছেন, তা কড়া ভাবে কার্যকর করতে পুলিশ ও প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement