বার্নপুরে মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
টানা ছ’ দিনের বৈঠকেও বেরলো না সমাধান সূত্র। বেতন চুক্তি নিয়ে সেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে সমাধান না বেরনোয় ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় রইল শ্রমিক সংগঠনগুলি। সোমবার দুর্গাপুর ইস্পাতের (ডিএসপি) সামনে সব শ্রমিক সংগঠনগুলি একজোট হয়ে ধর্মঘটের সমর্থনে সভা করে। এ দিন ধর্মঘটের সমর্থনে বার্নপুরে মিছিল করে সিটু। নেতৃত্ব দেন সিটুর জেলা সম্পাদক তথা আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশোগোপাল চৌধুরী।
সেল ও শ্রমিক সংগঠনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বেতন চুক্তি চূড়ান্ত করার রীতি চলে আসছে সংস্থায়। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬-র ৩১ ডিসেম্বর। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দাবি, সে হিসেবে ২০১৭ থেকে নতুন বেতন চুক্তি বকেয়া পড়ে রয়েছে। কিছু দিন আগে, নতুন বেতন চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ মার্চ দিল্লিতে বৈঠকে সেল কর্তৃপক্ষ পাঁচ বছরের জায়গায় একেবারে দশ বছরের জন্য বেতন চুক্তি চালু করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সংগঠনগুলির দাবি, তা কার্যকর হলে শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তা ছাড়া, বেতন, পেনশন, অবসরকালীন বকেয়া-সহ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে দু’পক্ষ কোনও সহমতে পৌঁছতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সে বৈঠক মাঝপথেই ভেস্তে যায়।
এর পর থেকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। গত ৬ মে সব কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি একযোগে ইস্পাত শিল্প ক্ষেত্রে ধর্মঘটের ডাক দেয়। তবে করোনা অতিমারির জন্য সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আলোচনা করে ৩০ জুন দেশ জুড়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন। ধর্মঘটের সমর্থনে তার পর থেকে ডিএসপি-র সামনে সভা করছেন সিটু, আইএনটিইউসি, বিএমএস, আইএনটিটিইউসি, এআইটিইউসি, এআইইউটিইউসি ও এইচএমএস প্রভৃতি সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এই পরিস্থিতিতে বেতন চুক্তি নিয়ে ২২ জুন ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকের ডাক দেয় সেল। সে বৈঠক টানা ছ’দিন চলে। কিন্তু দাবি-দাওয়া নিয়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় রবিবার রাতে শ্রমিক সংগঠনগুলি জানিয়ে দেয়, ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে।
সিটুর রাজ্য কমিটির অন্যতম সম্পাদক তথা ‘হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর নেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সেল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি নিয়ে সংবেদনশীল মনোভাব দেখাননি। তাই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে।’’ বিএমএস প্রভাবিত ‘দুর্গাপুর ইস্পাত কর্মচারী সঙ্ঘ’-এর নেতা মানস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেল কর্তৃপক্ষের ‘অসহযোগিতা’র বিরুদ্ধে ৩০ জুন শ্রমিকেরা ধর্মঘটে যোগ দেবেন।’’ ধর্মঘটের কারণে উৎপাদন বন্ধের দায় সংস্থা কর্তৃপক্ষকে নিতে বলে মন্তব্য বিএমএস প্রভাবিত ‘অল ইন্ডিয়া স্টিল ফেডারেশন’-এর সহ-সভাপতি অরূপ রায়ের। এ দিকে, বরাবর ধর্মঘটের রাজনীতির বিরুদ্ধে থাকলেও এ বার সে পথে যাচ্ছে না আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট মজদুর ইউনিয়ন’। সংগঠনের সহ-সম্পাদক স্নেহাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘এই আন্দোলনে শ্রমিক-ঐক্যের পক্ষে আমরা।’’
তবে আগে ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে সহমত হলেও এখন ধর্মঘটে শামিল না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএনটিইউসি। সংগঠনের জেলা সভাপতি বিকাশ ঘটক বলেন, ‘‘ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত জানানোর পরে সেল কর্তৃপক্ষ আলোচনা শুরু করেছেন। কথাবার্তা ও ধর্মঘট, একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই আপাতত ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।’’ ডিএসপি’র সিটু নেতা সৌরভ দত্তের দাবি, ‘‘আইএনটিইউসি ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়েছে এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। ৩০ জুন কী হয় দেখে তবেই এ বিষয়ে বলা সম্ভব হবে।’’