ফি বছর এই সময়ে পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে আসানসোলের ভ্রমণ সংস্থার অফিসগুলি। কিন্তু এ বার নোট বাতিলের বাজারে সেই চেনা ছবিটা উধাও। নতুন করে ঘুরতে যাওয়া তো দূর অস্ত, আগেভাগে থেকে ঠিক করে রাখা ‘ট্যুর’ও বাতিল করে দিতে হচ্ছে। ব্যবসা কার্যত লাটে উঠেছে বলে জানান ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধারেরা।
আসানসোল মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে রয়েছে ৩৫ বছরের পুরনো ভ্রমণ সংস্থা ‘পর্যটক-পরিবেশক’। সংস্থার কর্ণাধার বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, এ বছর সেপ্টেম্বরের পরে আর নতুন করে কোনও ‘বুকিং’ নেওয়া হয়নি। পর্যটক না থাকায় ডিসেম্বরে আগেভাগে ঠিক করে থাকা রাজস্থান, কেরল ও সুন্দরবন যাত্রাও বাতিল করতে হয়েছে। এপ্রিল মাসে শ্রীনগরে ‘টিউলিফ ফেস্টিভ্যালে’র আগে আর বুকিং নেওয়া হবে না। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “অত জনকে নিয়ে কী ভাবে বাইরে যাব। কী ভাবেই বা এত সংখ্যায় খুচরো টাকা জোগাড় করব!’’
এসবি গড়াই রোড লাগোয়া এলাকায় ১৮ বছর ধরে ‘পরিব্রাজক’ নামে একটি ভ্রমণ সংস্থা চলছে। নোট-বাতিলের ঘোষণার পরে নগদের সঙ্কটের কারণে এ যাবৎ রাজস্থান, সিমলা, সিকিম সফর বাতিল করতে হয়েছে বলে জানান ভ্রমণ সংস্থার কর্মকর্তা বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৩০ শতাংশ কম পর্যটক বুকিং করেছেন বলে দাবি। সম্প্রতি এই সংস্থার কর্তারা গুজরাট গিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বাসুদেববাবু বলেন, “গুজরাটে বেশির ভাগ পেট্রোল পাম্প পাঁচশো, হাজার টাকার নোট নিতে চাইছিল না। বেশ কিছু জায়গা কাটছাঁট করতে হয়েছে।’’
সমস্যায় পড়েছে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষক সংস্থা ‘পিকার্স’ও। তাদের তরফে মিলন সেনগুপ্ত জানান, তাঁদের আয়োজিত জয়চণ্ডী পাহাড়ে চার দিনের শিবিরে প্রতি বছর প্রায় তিনশো জন যোগ দিলেও এ বার সংখ্যাটা প্রায় অর্ধেক।
পর্যটনে ধাক্কা যে লেগেছে, তা মালুম প়ড়ে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মুর কথাতেও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত বছর ১-১৫ ডিসেম্বর বুকিং হয়েছিল সাড়ে ৯৩ হাজার। এ বার সংখ্যাটা ৭৫ হাজারের আশেপাশে।’’