উঠছে ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকার অভিযোগ। ছবি: উদিত সিংহ।
কারও হাত পড়েছে মাথায়। কারও আবার পোয়া বারো।
দামোদরের উপরে কৃষক সেতু বন্ধ থাকায় এমনই অবস্থা নানা জনের। এক দিকে যখন এক ধাক্কায় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী বা বাসের মালিক-কর্মীদের মাথায় হাত পড়েছে। অন্য দিকে তেমন টোটো চালক বা নৌকার মাঝিদের পালে হাওয়া লেগেছে।
শুক্রবার থেকে কৃষক সেতু মেরামতের জন্য যে কোনও রকম যান চলাচল বন্ধ করেছে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। এই সেতু বন্ধ থাকায় মুশকিলে পড়েছেন বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী, পাত্রসায়র, ইন্দাস, শাসপুর, রসুলপুর বা হুগলির আরামবাগের মতো বিভিন্ন এলাকার অনেক ব্যবসায়ীও সমস্যায় পড়ছেন। তাঁরা বর্ধমানের উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই শহরের নতুনগঞ্জ বা তেঁতুলতলা বাজার থেকে পাইকারি মুদিদ্রব্য কিনে নিয়ে যান তাঁদের অনেকে। কৃষক সেতু বন্ধ থাকায় চার দিন ধরে ওই ব্যবসায়ীরা বর্ধমান শহরে ঢুকতে না পারায় ব্যবসা অনেকটা মার খাবে বলে মনে করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
নতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী রামকিঙ্কর শর্মা যেমন বলেন, “দক্ষিণ দামোদর ও পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষের উপরে আমাদের এখানকার ব্যবসা নির্ভর করে। প্রথম দু’দিনেই আমাদের ব্যবসা ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত এই খরা চলবে।” একই অবস্থা তেঁতুলতলা বাজারেও। এখানেও বাজার-শূন্যই বলা চলে। রায়নার সেহেরাবাজারের ব্যবসায়ী সজল সোম বলছিলেন, “ওই সেতু বন্ধ থাকায় অর্থনীতির আঘাত প্রত্যন্ত গ্রামেও ধাক্কা দিয়েছে। আমি বর্ধমান থেকে পাইকারি বাজার করে বাড়িতে মুদির জিনিস মজুত করছি। সেখান থেকে গ্রামে-গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছি।”
পাইকারি বাজারের মতো ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বাসমালিকেরাও। কৃষক সেতুর উপর দিয়ে দিনে ২১৮টি বাস চলাচল করে। সেতু বন্ধ থাকায় বাস চলাচল বন্ধ। বর্ধমানের মালিকদের বাস স্ট্যান্ডেই রয়েছে। আর বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হুগলি বা দক্ষিণ দামোদর এলাকার মালিকদের বাস কৃষক সেতুর এক কিলোমিটার আগে পর্যন্ত এসে থেমে যাচ্ছে। বর্ধমান জেলা বাস মালিক সমিতির সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, “একে গরমে যাত্রী পাচ্ছিল না বাসগুলি। তার মধ্যে কৃষক সেতু বন্ধ হয়ে ব্যবসায় ক্ষতি হল।”
এর মধ্যে হাসি ফুটেছে টোটো চালক ও নৌকার মাঝিদের মুখে। মধু সিংহ নামে এক মাঝির কথায়, “দামোদর দিয়ে কেউ নৌকায় লোকজন যেতেন না। বালি শ্রমিক হয়ে জীবন কাটছিল। সেতু বন্ধ হওয়ায় আমাদের এখন পৌষ মাস। ভাল আয় হচ্ছে।” টোটো চালকরা মওকা বুঝে যাত্রীদের কাছে ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমনিতে কৃষক সেতুর আশপাশে টোটো দাঁড়ায় না। সেতু বন্ধ থাকায় তারা দাঁড়িয়ে থাকছে। শহরে অলিখিত নিয়ম, টোটোয় চড়লে ভাড়া গুনতে হবে দশ টাকা। এখন সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে মর্জি মাফিক।
সেতু বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন অসুস্থরা। এ দিন দেখা যায়, রোগীদের কোলে করে সেতু পার করাচ্ছেন পরিজনেরা। কখনও বা কোনও মতে হাঁটিয়ে সেতু পার করা হচ্ছে। যা দেখে দক্ষিণ দামোদর এলাকার প্রাক্তন শিক্ষক শৈলেন সাঁইয়ের মন্তব্য, “অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা করে পারত।” গরমের জন্য স্থানীয় যুবকেরা সেতুর কাছে জলসত্র খুলেছেন।