সাংবাদিক বৈঠকে উত্তমবাবু।
সম্প্রতি শাসক দলের কাউন্সিলর থেকে তাঁর পরিচয় দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের কংগ্রেসে প্রার্থী। তিনি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। শুক্রবার একদা শাসকদলের কাউন্সিলর বিশ্বনাথবাবুকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানালেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিরোধীদের যদিও কটাক্ষ, দল ছাড়ার পাঁচ দিন পর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসলে খানিকটা হলেও শাসকদলের অস্বস্তিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দিন কয়েক আগেই জোট-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন মহিলা তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভানেত্রী শম্পা দরিপা। তার পরেই তাঁকে বাঁকুড়া কেন্দ্রে প্রার্থী করে কংগ্রেস। কিন্তু বিশ্বনাথবাবুর ক্ষেত্রে এ যেন এক উল্টো পুরাণ! বিরোধী দলের প্রার্থী হওয়ার দিন পাঁচেক পরে বিশ্বনাথবাবুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত কতটা সময়োপযোগী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শহরের রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যদিও তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আগেই পুরো বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়। দলবিরোধী কাজের জন্য বিশ্বনাথবাবুকে বহিষ্কার করা হল।’’
গত ২০ মার্চ, রবিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। সিপিএম প্রার্থী বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরে বাম-কংগ্রেসের জোটের তরফে এই কেন্দ্রে তিনিই প্রার্থী। দলবদল করেই বিশ্বনাথবাবু তোপ দেগেছিলেন বিদায়ী বিধায়ক ও এ বারের তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে। দল ছেড়েই বিশ্বনাথবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের অহঙ্কার আমাকে দল ছাড়তে বাধ্য করেছে।’’ এরপর বৃহস্পতিবার পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিশ্বনাথবাবুর বাড়ি কড়ঙ্গপাড়ায় প্রচারে গিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের ঘেরাও ও ক্ষোভের মুখে পড়েন অপূর্ববাবু। বাউড়িপাড়ায় যেতেই কার্যত ছেঁকে ধরেন কয়েক জন বাসিন্দা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিধায়ক হওয়ার পরে গত পাঁচ বছরে অপূর্ববাবু কোনও খোঁজখবর নেননি। বিপদে-আপদে পাশে থাকেন বিশ্বনাথবাবুই। অপূর্ববাবু নিজে এগিয়ে গিয়ে হাতজোড় করে পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়ার পরেও তাঁরা চুপ করেননি। শেষমেশ দলের নেতা-কর্মীরা অপূর্ববাবুকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।
যদিও বিশ্বনাথবাবুর দল ছাড়ার পাঁচ দিন পর এই ‘বহিষ্কারে’র সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীদের দাবি, ভোট ময়দানে তৃণমূলকে রীতিমতো কড়া ট্যাকেলের মুখে ফেলে দিয়েছেন বিশ্বনাথবাবু। তাই মুখ রক্ষার্থে ‘বহিষ্কার’ ছাড়া আর উপায় ছিল না।
তৃণমূল প্রার্থীকে ঘেরাওয়ের পরেই কী বিশ্বনাথবাবুকে বহিষ্কারে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? যদিও উত্তমবাবুর দাবি, ‘‘এমন কিছু নয়। তিনি তৃণমূলের কাউন্সিলর। আশা করেছিলাম, অন্য দলে যোগ দেওয়ার পর নৈতিক দিক থেকেই তিনি কাউন্সিলর পদে ইস্তফা দেবেন। কিন্তু তা করেননি। তাই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত।’’ তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, ২০১৪ লোকসভা ভোটে বিশ্বনাথবাবুকে তেমন ভাবে ময়দানে নামতে দেখা যায়নি। অন্তত তিনটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের ভোটও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়। বিশ্বনাথবাবুর কারণেই এমনটা হয়েছিল বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। যদিও এই ‘প্রভাব’কেই কাজে লাগাতে চাইছেন জোটের নেতারা।
‘বহিষ্কার’কে অবশ্য পাত্তা দিতে নারাজ বিশ্বনাথবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এই বহিষ্কারের কোনও অর্থ নেই। তৃণমূল ভয় পেয়ে প্রচারে বাধা দিচ্ছে। গাড়ি আটকে দিচ্ছে।’’ সিপিএমের দুর্গাপুর পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের আবার দাবি, ‘‘বহিষ্কার তো এক জনকে করা হল। আরও বহু নেতা আসবেন জোটের সমর্থনে।’’ যদিও দুর্গাপুরে ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিপিএম নেতাদের সঙ্গে বরাবরের ওঠাবসা বিশ্বনাথবাবুর। দলে আস্থা হারিয়েছিলেন তিনি।’’
নিজস্ব চিত্র।