আউশগ্রামে সুনসান তৃণমূল কার্যালয়। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
গুসকরা বাসস্ট্যান্ডের কাছে আউশগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের কার্যালয় সাধারণত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গমগম করে। বৃহস্পতিবার সে কার্যালয় কার্যত জনশূন্য। দুপুরের পরেই তালাই পড়ে গেল সেখানে।
বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অনুব্রত মণ্ডল গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন, এ খবর মেলার পরে ওই তিন বিধানসভা এলাকায় শাসক দলের অনেক কার্যালয়েই এমন ছবি দেখা গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।
ওই তিন বিধানসভার তৃণমূল কর্মীদের অনেকের দাবি, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম এক সময়ে ‘লাল দুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে অনুব্রত (দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে ‘কেষ্টদা’) এলাকার দায়িত্ব নেন। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোট দলের তরফে তিনিই পরিচালনা করেছিলেন। তখন থেকে দলের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। মঙ্গলকোট-কেতুগ্রামে ‘সন্ত্রাসের’ সময়েও তিনি লড়াই করার সাহস জুগিয়েছিলেন, দাবি নিচুতলার কর্মীদের অনেকের। সিবিআইয়ের হাতে ‘কেষ্টদা’ গ্রেফতার হওয়ায় দলের সংগঠনে বড় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সামনে পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটে কার নেতৃত্বে লড়াই হবে, সে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলকোট, আউশগ্রামের তৃণমূল কিছু কর্মীর দাবি, ফের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কেষ্টদার দাপটে ‘দ্বন্দ্ব’ খানিক আটকে ছিল, বিরোধীরাও ‘চাপে’ ছিল। কেষ্টদা ছাড়া সংগঠন কী ভাবে চলবে, তা চিন্তার।’’ তবে অনুব্রত গ্রেফতারের খবরে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী থেকে শুরু করে বিরোধীদের গলায় আনন্দের রেশ। তৃণমূলের এক ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতার দাবি, ‘‘নেত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়ে দলকে সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ার্ত করে তুলেছিল। ফলে, আমার মতো বহু তৃণমূল কর্মী বসে যায়। এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কেষ্টর রাশ চলে গেলে কুকর্মে যুক্ত অনেক নেতা-কর্মী বসে যাবেন। তাতে এলাকায় দলের ভাবমূর্তি ফিরবে।’’
মঙ্গলকোটের সিপিএম নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক সাজাহান চৌধুরীর দাবি, “এলাকায় কেষ্ট মণ্ডল ত্রাস বলেই পরিচিত।’’ জেলা (কাটোয়া সাংগঠনিক) বিজেপি সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের, “ওই তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হওয়ায় সাধারণ মানুষ খুশি হয়েছেন। ভয় ছেড়ে মানুষ রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের সংগঠনও বাড়বে।’’ বিজেপির গুসকরা মণ্ডল কমিটির সভাপতি পতিতপাবন হালদারের আবার অভিযোগ, ‘‘এই চক্রের জাল অনেক গভীরে। অনুব্রতকে জেরা করলেই সব বেরোবে। সকলেই ধরা পড়বে।’’ সিপিএম নেতা সুব্রত মজুমদারের দাবি, “এলাকায় সাংগঠনিক কাজ করার মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। অনুব্রতের নির্দেশে এলাকায় কিছু দুষ্কৃতী দাপিয়ে বেড়াত, অশান্ত করে রাখত। এ বার সেটা যদি কিছুটা কমে, আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারব।’’
বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের পড়শি, আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের অবশ্য দাবি, “সংগঠনে কোনও প্রভাব পড়বে না। দলের সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। মাথার উপরে দলেনত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন।’’ আউশগ্রামের তৃণমূল নেতা, অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অরূপ মির্ধারও দাবি, ‘‘বিজেপি চক্রান্ত করে দাদাকে ফাঁসিয়েছে। সংগঠনে তেমন প্রভাব পড়বে না। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিধায়কের নির্দেশে সংগঠন চলবে।’’
পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “সীমান্তে গরু পাচার আটানোর দায়িত্বে তো রয়েছে বিএসএফ! গরু পাচার কাণ্ডে মিথ্যা অভিযোগে বিজেপির চাপে সিবিআই গ্রেফতার করেছে অনুব্রতকে।’’