খুনের পরে পুকুরে দেহ, বিজেপির দিকে রায়নার নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর

নিহতের স্ত্রী অনিতা মাঝির অভিযোগ, ‘‘ঘটনার পিছনে রয়েছে বিজেপি।’’ একই সুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেছেন, “বাম জমানার মতো ফের সন্ত্রাসের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মাধবডিহি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৬
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের স্ত্রী অনিতাদেবী। নিজস্ব চিত্র

মাথা নীচে। পা উপরে। সাতসকালে রাস্তায় বেরিয়ে পুকুরে ওই ভাবে পোঁতা দেহ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন এলাকাবাসী। পুলিশ গিয়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লকের সদর মাধবডিহির আদিবাসীপাড়া লাগোয়া সাঁইপুকুর থেকে উদ্ধার করে এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত অনিল মাঝির (৪৭) দেহ। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কৃষ্ণ হাঁসদা নামে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

Advertisement

নিহতের স্ত্রী অনিতা মাঝির অভিযোগ, ‘‘ঘটনার পিছনে রয়েছে বিজেপি।’’ একই সুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেছেন, “বাম জমানার মতো ফের সন্ত্রাসের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিজেপি। সে জন্যই আমাদের এক কট্টর কর্মীকে খুন করা হল। আসলে সিপিএমের দুষ্কৃতীরাই বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি ও সিপিএমের নেতারা। বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর দাবি, “তৃণমূলের অত্যাচারে আমাদের লোকেদের কখনও একঘরে, কখনও ঘরছাড়া হতে হচ্ছে। সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে। নিজেদের গৃহবিবাদ তৃণমূল আমাদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।’’ ধৃতের সঙ্গে দলের যোগ নেই, দাবি করেছেন তিনি।

পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কেউ জড়িত কি না জানার চেষ্টা চলছে।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‌‌হেড কোয়ার্টার, পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়ব্রত রায় জানান, জেরায় ধৃত তাঁদের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। আজ, বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে ধৃতকে।

Advertisement

রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লকের যুব সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি সৈয়দ কলিমুদ্দিনের (বাপ্পা) ‘ডান হাত’ বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন অনিলবাবু। ২০১৫ সালে ১০মে এ দিনের ঘটনাস্থল থেকে ৫০ মিটার দূরে স্বর্ণচাঁপা পুকুরের পাড়ে খুন হয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন সভাপতি আব্দুল আলিম ওরফে বাবলু। সেই খুনে অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন অনিল। জেলও খেটেছিলেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, তৃণমূলের দলীয় দফতরের কাছে মাধবডিহি-আলমপুর রোডের বাঁক পেড়িয়ে আদিবাসী পাড়ার একটি দেওয়ালে জমাট রক্তের দাগ। পুলিশ সে জায়গা ঘিরে দিয়েছে। রক্তের জায়গায় খড় চাপা দেওয়া রয়েছে। সেখান থেকে রাস্তা পার করে জমির আল দিয়ে রক্তাক্ত কিছু (পুলিশ সূত্রের দাবি, মৃতদেহ) নিয়ে যাওয়ার চিহ্নও স্পষ্ট। পুলিশ জানায়, ১০০ মিটার দূরে সাঁইপুকুর পাড় পর্যন্ত ১৩টি জায়গায় চাপচাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি জায়গা চুন দিয়ে চিহ্নিত করা রয়েছে। আর একটি জায়গা পুলিশ ত্রিপল ঢাকা দিয়ে রেখেছে। আজ, বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় ফরেন্সিক দলের যাওয়ার কথা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনিল সারা দিনই মাধবডিহিতে রায়না ২ ব্লক দফতরের সামনে দলীয় অফিসে থাকতেন। অন্য দিনের মতো মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ মোটরবাইকে করে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দেন তিনি। কিন্তু বাড়ি পৌঁছননি। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, মাধবডিহি-আলমপুর রাস্তায় অনিলবাবুর মাথায় বাঁশ জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। মোটরবাইক থেকে পড়ে গেলে, দেহ তুলে নিয়ে গিয়ে ১০০ মিটার দূরে ওই পুকুরে পুঁতে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে রাস্তার পাশে হাটগোড়ের পুকুর থেকে মোটরবাইকটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহতের স্ত্রী বলেন, “দলের কাজে স্বামী অনেক সময় রাতে বাইরে থাকেন। সে জন্য ভেবেছিলাম, পার্টির কাজেই কোথাও গিয়েছেন। কিন্তু এ রকম সর্বনাশ হবে, বুঝিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement