দলের নেতাদের নামে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে এল তৃণমূলেরই লোক।
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা তদন্তে গেলে তাঁদের সামনেও একই কথা বললেন আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরের অভিযোগকারীরা। সঙ্গে দলের নেতাদের নামে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে দলেরই লোক (পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি) কেন গেলেন উঠেছে সে প্রশ্নও। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএমও।
আউশগ্রাম ১-এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘‘অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনেছি। অভিযুক্তদের ডেকে পাঠাব। তারপরে রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’
ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন জেলার অনুন্নত শ্রেণিকল্যাণ দফতরে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, শাসকদলের নেতা সুশান্ত রায়, আশিস প্রামাণিকেরা ভয় দেখিয়ে কারও কাছ থেকে ৫ হাজার, কারও কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। না দিলে বাড়ি তৈরির টাকার পরবর্তী কিস্তি আটকে রাখারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই খবর সংবাদপত্রে বেরতেই জেলা প্রশাসন নড়ে বসে। মঙ্গলবারই ওই দফতরের আধিকারিক শান্তনু বসু বর্ধমানের (উত্তর) মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে তদন্তের জন্য বলেন। মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু সরকার বিডিওকে নির্দেশ দেন, জনজাতিভুক্ত অভিযোগকারীদের কাছে গিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাতে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে থেকে সন্ধে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চিত্তজিৎবাবু, সভাপতি মনোরঞ্জন মাঝি, সহ-সভাপতি মৃণালকান্তি রায়, পঞ্চায়েত অ্যাকাউন্টস অফিসার ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক দ্বারিয়াপুরে গিয়ে অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনেন। পুরোটা মোবাইলে ভিডিও করা হয়। অভিযোগকারী রানি হাঁসদা দাবি করেন, ‘‘রেশন বন্ধ, বার্ধক্য ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার নাম করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। টিপসই জাল করা হয়েছে।’’ এর পরেই তদন্তে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির নেতারা কেন এসেছেন, সে নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগকারী দলটি জগদীশ হাঁসদা, বাসু টুডু, চৈতন টুডু ও রবি মুর্মুর বাড়িতেও যান। তাঁরাও জানান, তৃণমূলের কিছু কর্মী ভয় দেখিয়ে, তাঁদের সই জাল করে টাকা তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেন, তাঁদের টাকাতেই দ্বারিয়াপুর মোড়ে তৃণমূলের দফতর তৈরি হচ্ছিল। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরেই টাকা চাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দলীয় দফতরও অর্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে।
সিপিএম নেতা অনুপ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। অথচ প্রশাসনের সঙ্গে তৃণমূলের লোকেরাই তদন্ত করতে চলে এল। অভিযোগকারীরা মুখ খুলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তদন্ত ঠিক হবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।’’ এই প্রতিবাদে জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন মাঝির দাবি, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, কয়েকজন ব্যক্তির নামে অভিযোগ রয়েছে। তাই গিয়েছিলাম।’’ বিডিও-র যুক্তি, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী অফিসার হিসেবে সরকারি আবাস প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছি। সেই হিসেবে তদন্তে গিয়েছিলাম। সে জন্য পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারাও ছিলেন। তাঁরা গিয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করেছেন।’’