ভোটের দিন এক-আধটা বুথ ছাড়া খুব বেশি গোলমাল না হলেও ১৬-০ ধরে রাখা নিয়ে সন্দিহান তৃণমূলের নেতারাই। সরাসরি না বললেও আকারে, ইঙ্গিতে অনেক বলছেন, সে দিন আর নেই। সেই সুযোগে বিরোধী শিবিরেরও আশা, খালি হাতে তাঁদের ফেরাবে না মেমারি।
২০১০ সালে সিপিএম নেতা বিনয় কোঙারের খাসতালুক মেমারিতে ১৬টি আসনে জিতেছিল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। তৃণমূল পেয়েছিল ১২টি, আর কংগ্রেস ৪টি। পরে অবশ্য কংগ্রেসের কাউন্সিলরেররা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ১৬টি তৃণমূলের দখলে চলে যায়। এ বারের প্রচার চলাকালীনও ১৬-০ ফল হবে বলেই দাবি করছিলেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু শনিবারের তুলনায় নির্ঝঞ্ঝাট ভোটের পরে অনেকের গলাতেই সংশয়ের সুর। মেমারির তৃণমূল বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডল সোমবার বলেন, “শেষ পর্যন্ত আমরাই বোর্ড গড়ব এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আগের মতো একতরফা ফলাফল হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দলের মধ্যের ভোট ভাগাভাগির খেলায় কয়েকটি ওয়ার্ড হারাতে পারি আমরা।” তবে সে সংখ্যা কত তা তিনি বলতে চাননি।
গত বার পুরবোর্ডের দখল নেওয়ার পরেই তৃণমূলের একের পর এক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে থাকে। বিদায়ী পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন ঘোষালের মধ্যে আকচা-আকচি কলকাতা পর্যন্তও গড়ায়। ওই কাউন্সিলরের দাবি ছিল, কারও সঙ্গে আলোচনা না করে একাই সমস্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন পুরপ্রধান। একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এ বারের প্রথম প্রার্থিতালিকায় দেখা যায়, স্বপন ঘোষাল-সহ ৮ তৃণমূল কাউন্সিলার বাদ গিয়েছেন। বিদ্রোহ চরমে ওঠে। বাদ পড়া নেতারা রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানান। তারপরে নতুন তালিকায় তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও ভোটের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেকটাই কটিয়ে ওঠা গিয়েছিল দাবি করেছিলেন পুরপ্রধান স্বপনবাবু। বিরোধীদের অবশ্য আশা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব ভোটে পড়বেই। তার জেরে পাল্লা কতটা হেলে সেদিকেই তাকিয়ে এখন তাঁরা।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, ১, ৪, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলের জয় নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই চারটি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীরা হলেন, সামসুল হক মির্জা, স্বপন ঘোষাল, নির্মল রায় ও হোসেনারা খাতুন। স্বপনবাবুর ওয়ার্ডে ভোটের দিনই তিনি প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। হোসেনারা খাতুন শনিবার বলেছিলেন, “আমি প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নিতে চাই। কারণ দল আমাকে সাহায্য না করে এই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে।”
আর এখানেই আশা দেখছেন বিরোধীরা। মেমারির কংগ্রেস নেতা সেলিম মেল্লার আশা, “১, ৩, ৪, ৬ ওয়ার্ডে ভোট কাটাকাটির জেরে আমাদের প্রার্থীরাই জিতবে।’’ বিজেপি নেতা ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যও বলেন, “৮৪ শতাংশ ভোট পড়ায় আমাদের আশা বেড়েছে। আটটি ওয়ার্ডে জয়ের আশা রয়েছে।’’ আর সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন উপপুরপ্রধান অভিজিত কোঙারের দাবি, ‘‘গত বার শূন্য হয়েছিলাম। এ বারে হারাবার কিছু নেই। তবে এ ভোটের দিন মনে হয়েছে, মানুষের সঙ্গে আগের দূরত্ব আর নেই। আশা করি মানুষ আমাদের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন।”
তবে বিরোধীদের আশা হেলায় উড়িয়ে বিদায়ী পুরপ্রধানের দাবি, “আমরাই ১৬-০ ফলে জিতব। মেমারিতে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ হয়েছে। মানুষ উন্নয়নকেই ভোট দিয়েছেন।’’