TMC

তৃণমূল নেতার ‘হুমকি’, বন্ধ চারটি শোরুম

চলতি বছরের আর্থিক পরিস্থিতির নিরিখে এ বার কর্মীদের মাসিক বেতনের অর্ধেক বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি

শ্রমিকদের বোনাস সংক্রান্ত আলোচনা চলছিল একটি গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার গাড়ি বিক্রির ‘এজেন্সি’ কর্তৃপক্ষ এবং কর্মী ইউনিয়নের মধ্যে। অভিযোগ, সেখানেই তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ ব্লক সভাপতি সাধন রায় কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়েছেন। এর পরেই শুক্রবার রাতে ওই এজেন্সি কর্তৃপক্ষ জামুড়িয়ার চাঁদা, চিত্তরঞ্জনের জেমারি, বীরভূমের সিউড়ি ও পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে তাদের চারটি গাড়ির শোরুম এবং বারাবনির রূপনারায়ণপুরে গাড়ির ওয়ার্কশপ বন্ধ করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কর্মহীন প্রায় ৩৫০ জন। তবে সাধনবাবু হুমকি দেওয়ার অভিযোগ মানেননি।

Advertisement

এজেন্সি কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি বছরের আর্থিক পরিস্থিতির নিরিখে এ বার কর্মীদের মাসিক বেতনের অর্ধেক বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে চাঁদায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে ওই এজেন্সিতে থাকা আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কর্মী ইউনিয়ন এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেখানে চারটি শোরুম ও ওয়ার্কশপ থেকেই কর্মীরা যোগ দেন। ছিলেন সাধনবাবুও। শুক্রবার এজেন্সি কর্তৃপক্ষের তরফে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি এবং আইএনটিটিইউসি জেলা চেয়ারম্যানকে ই-মেল করা হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়, সাধনবাবু ২৪০ দিনের বেতনের ২০ শতাংশ দিতে হবে বলে অনড় থাকেন। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সেখানে সাধনবাবু ‘হুমকি’ দিয়ে বলেন, ‘‘আমি বৈঠক ছেড়ে গেলে কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। তখন কোনও ঘটনা ঘটলে দায় কর্তৃপক্ষের।’’— এমন আবহেই রাত ১১টা পর্যন্ত চলে ‘আলোচনা’।

কর্তৃপক্ষ জানান, এই পরিস্থিতিতেই তাঁরা শুক্রবার রাতে বাধ্য হয়ে শোরুমগুলি এবং ওয়ার্কশপে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হন। ওই এজেন্সিটির তরফে জিএম (‌সেলস) কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নিরাপত্তার অভাবের কারণে শনিবার আমি-সহ অন্য আধিকারিকেরা ইস্তফা দিলাম। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হলে কাজ করা সম্ভব নয়।’’ তবে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাধনবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে কর্মীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন। তাঁদের ডাকেই আমি ওখানে গিয়েছিলাম। কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।’’

Advertisement

এ দিকে, এই ঘটনার পরেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়দের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের দাদাগিরির কারণে একের পরে এক শিল্প প্রতিষ্ঠানে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আখেরে জেলার মানুষই এর ফল ভুগছেন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে আইএনটিটিইউসি জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন বলেন, “সাধনবাবু দলের ব্লক সভাপতি। তার সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই তাঁর কর্মীদের বৈঠকে যাওয়ার কোনও বৈধতা নেই। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।’’ পাশাপাশি, তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের মধ্যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করিয়ে শোরুমগুলি চালু করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিক্রিয়ার জন্য বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ফোন ধরেননি। রাত পর্যন্ত উত্তর মেলেনি এসএমএস-এরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement