TMC

‘স্বীকৃতি’র ডাকেও পৃথক সভা তৃণমূলে

এই ধরনের কর্মসূচি বিধায়কদের ডাকার কথা। তাঁদের সবাইকে নিয়ে চলা উচিত। তবে আমায় কেউ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ করেননি। স্বপন দেবনাথ তৃণমূল জেলা সভাপতি

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০০:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি

পুরনো কর্মীদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরাতে ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’ করছে তৃণমূল। তার মধ্যেও কোথাও বিধায়ক, ব্লক সভাপতি আলাদা অনুষ্ঠান করছেন। কোথাও ডাকা হয়নি বলে ক্ষোভ জানাচ্ছেন কর্মীরা। বিরোধীদের দাবি, দ্বন্দ্ব ভোলার ডাক দিতে গিয়ে ফাটল আরও বেশি প্রকট হচ্ছে তৃণমূলে।

Advertisement

রবিবার বিকেলে মন্তেশ্বর বিধানসভার অন্তর্গত মেমারির পাহাড়হাটিতে ওই সম্মেলন করেন বিধায়ক সৈকত পাঁজা। আবার কুসুমগ্রামেও মন্তেশ্বর ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখের নেতৃত্বে ওই অনুষ্ঠান হয়। বিধায়কের দাবি, কুসুমগ্রামের কর্মসূচির কথা জানতেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘‘দল মন্তেশ্বর বিধানসভার বিধায়ক হিসেবে একমাত্র আমাকেই এই কর্মসূচি করার অনুমোদন দিয়েছে।’’ পাল্টা আহমেদ হোসেনের দাবি, ব্লকের প্রতিটি অঞ্চলের সভাপতি, প্রধান, উপপ্রধান-সহ ব্লক স্তরের সমস্ত নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিয়েছে কর্মীরা কার নেতৃত্বে থাকতে চান। তাঁর দাবি, ‘‘ব্লক সভাপতির অনুমোদন নিয়ে দলীয় সংগঠন মজবুত করতেই এই উদ্যোগ।’’ বিধায়ক নিজের পছন্দমতো লোক নিয়ে অনুষ্ঠান করছেন বলেও দাবি করেন তিনি। মন্তেশ্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি আজিজুল হক ছিলেন কুসুমগ্রামের সভায়। তিনি বলেন, ‘‘বৈধ, অবৈধ জানি না, দলীয় কর্মীদের একত্রিত করার লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’

কালনাতেও বৈদ্যপুর এলাকায় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠান হয়। তৃণমূলের দাবি, সেখানে দলে যোগ দেন কালনা ২ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আমানুল্লা শেখ, প্রাক্তন বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সুভাষ রায় ও তাঁদের অনুগামীরা। বিজেপি থেকেও যোগ দেন কয়েকজন। তবে অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রণব রায়, কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ-সহ বেশির ভাগ পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের। বৈদ্যপুরের অনুষ্ঠানের আগে ব্লক তৃণমূল কার্যালয় লাগোয়া ঐক্যতান হলেও একটি পৃথক সভা করেন তাঁরা। সেখানেও কালনা শহর ও কালনা ২ ব্লকের বেশ কিছু কর্মীকে সম্মান জানানো হয়। প্রণববাবুর দাবি, বিধায়কের সভায় আমন্ত্রণ পাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মতো অনেকেই অপমানিত। সাধারণ মানুষই আমাদের শক্তি। এর বাইরে অন্য কিছু ভাবতে চাই না।’’ যদিও বিধায়কের দাবি, দলের অনুষ্ঠানে সবাইকে নিয়ম মেনেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

Advertisement

কাটোয়ায় আবার বিধায়কের স্বীকৃতি সম্মেলনে ডাক না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বেশ কিছু কর্মী। যদিও বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পিকে টিমের নির্দেশিকা মতোই কাজ করছি। ওঁরা যে ৬২ জন পুরনো কর্মীদের ডাকতে বলেছিলেন তাঁদের প্রত্যেককেই ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’

কাটোয়ার মেঝিয়ারি গ্রামের হিমাংশু কুন্ডু নামে এক বর্ষীয়ান তৃণমূল কর্মীর ক্ষোভ, ‘‘আমি ১৪ বছর ধরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৬ সালে রবীন্দ্রনাথবাবু দলে আসার পর থেকে আর ডাক পাইনি।’’ জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের কর্মী দেবব্রত রায়ও বলেন, ‘‘১৯৯৯ সালে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছিলাম। সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে সক্রিয় ভাবে দল করেছি। একাধিক ভোটে বুথ এজেন্ট ছিলাম। কিন্তু ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের জেরে এখন আর ডাক পাই না।’’ যদিও রবিবাবুর দাবি, ‘‘হিমাংশুকে ফোন করা হয়েছিল। ওঁর চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে আসতে পারবেন না জানিয়েছিলেন। আর দেবব্রতকে ফোনে পাওয়া যায়নি।’’ আবার আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, দাঁইহাট চক্রের তৃণমূলের সভাপতি সরগ্রামের বাসিন্দা অনিমেষ গুপ্তদের দাবি, ডাক না পেলেও দলের সঙ্গেই আছেন তাঁরা।

মেমারিতেও দু’দিন পৃথক সভা করেছেন বিধায়ক নার্গিস বেগম ও প্রাক্তন বিধায়ক আবু হাসেম মণ্ডল। বর্ধমান ১ ব্লকেও বিধায়ক নিশীথ মালিক ও জেলা পরিষদ সদস্য দুই জায়গায় পৃথক সভা করেছেন। তবে পৃথক সভাতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের কর্মসূচি বিধায়কদের ডাকার কথা। তাঁদের সবাইকে নিয়ে চলা উচিত। তবে আমায় কেউ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ করেননি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement