চেন পরিষ্কারের কাজ করার সময়ে গরম ছাই পড়ে জখম হলেন তিন জন ঠিকা শ্রমিক। শনিবার রাতে দুর্গাপুর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের (ডিটিপিএস) ঘটনা। এই ঘটনার পরে শ্রমিক নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘বটম অ্যাশ ক্লিনিকে’ কাজ করছিলেন আট জন ঠিকা শ্রমিক। কয়লা পোড়ার পরে চুল্লি থেকে আসা ছাই চেন দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ওই দিন ছাইয়ের জন্য ওই চেনটিই আটকে যায় বলে জানা গিয়েছে। তার পরে নিয়মমতো ছাই পরিষ্কার করতে যান প্রদীপ বাউরি, বিশ্বনাথ দাঁ ও তপন বুট। হাসপাতালের বেডে শুয়ে প্রদীপবাবু, বিশ্বনাথবাবুরা জানান, আচমকা ছাই গায়ে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে চেষ্টা করেও বেরোতে পারেননি তাঁরা। ফলে ওই গরম ছাইয়ের তাপে ঝলসে যান ওই তিনি শ্রমিক।
ওই তিন জন শ্রমিককে তাঁদের সহকর্মী ও আধিকারিকেরা উদ্ধার করে প্রথমে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁদের রাজবাঁধের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই শ্রমিকদের হাত ও মুখ ঝলসে গিয়েছে। তবে আপাতত তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।
এই ঘটনার পরে শ্রমিকদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কর্মী-নিরাপত্তায় নজর দেন না। তাই এমন ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে কারখানার দামোদর দাস নামে কারখানার এক ঠিকাকর্মীর দাবি, কর্তৃপক্ষ ঠিকাকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দিন। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউনাইটেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের (ইউটিইউসি) তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রজত দত্ত। আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ আহতদের পাশে থাকব। কারখানার কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানানো হবে।’’ ডিটিপিএস কর্তৃপক্ষ ঠিকা শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
শুধু এই ঘটনায় নয়, সাম্প্রতিক অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে জেলার নানা প্রান্তের সরকারি ও বেসরকারি কারখানাগুলিতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন ঠিকা শ্রমিকেরা। মাস দুয়েক আগেই ক্রেনের তার ছিঁড়ে মৃত্যু হয় বামুনাড়া শিল্পতালুকের এক ঠিকাকর্মীর। দিন পাঁচেক আগে ওই শিল্পতালুকেরই একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানায় ব্রয়লার ফেটে জখম হন তিন জন ঠিকা শ্রমিক। পরে তাঁদের এক জনের মৃত্যু হয়।
বারবার কেন দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন ঠিকা শ্রমিকেরাই? শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, অনেক সময়েই দেখা যায় ঝুঁকির কাজে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ শ্রমিকদের নিয়োগ করছেন এক শ্রেণির ঠিকাদার। তা ছাড়া ঠিকাকর্মীদের হেলমেট, জুতো, মুখের ‘মাস্ক’ও অনেক সময়ে দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ। সিটুর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর ক্ষোভ, ‘‘কারখানায় শ্রমিক-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারকে বারবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বহু কারখানাতেই শ্রম আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাবিধি মানা হয় না।’’