কেনাকাটা। নিয়ামতপুরের একটি দোকানে। ছবি: পাপন চৌধুরী
এ বার পুজো এসেছে। তবে অন্য ভাবে। তার একমাত্র কারণ অতিমারি। অন্য বারের মতো এ বার কেনাকাটা না হলেও ফ্যাশন ছাড়া, পুজোর কথা ভাবাই যায় না, জানাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই।
প্রথমে আসে শাড়ির কথা। পুজোয় শাড়ির একটা আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। এ বারও তাই শিল্পাঞ্চলের দোকান, বাজারগুলিতে পরিপাটি শাড়ির সম্ভার সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। এক ডাকে চেনা শাড়ির দোকানগুলিতে খোঁজ করে জানা গেল, তাঁত, কাঁথাস্টিচ, এমব্রয়ডারি, ঢাকাই, তসর, কাঞ্জিভরম, গাদোয়ালের মতো ‘ট্র্যাডিশনাল’ শাড়ির চাহিদা বেশ তুঙ্গে উঠেছে। সদ্য ডাক্তারি পাশ করে আসানসোল শহরে ফিরেছেন পারমিতা বসু। তিনি জানান, গত প্রায় সাত বছর দেহরাদুনে পড়াশোনার জন্য সময় কেটেছে। তাই পুজোর সাজ বলতে কিছুই ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন শুধু জিন্স, কুর্তি ও সালোয়ার পরেই কেটে গিয়েছে। এ বার তাই পুজোর চার দিন শাড়িই পরব।’’ শিল্পাঞ্চলের একটি অভিজাত শাড়ির দোকানের কর্ণধার ভক্ত দত্ত জানালেন, পুজোয় এ বার দক্ষিণী শাড়ির সম্ভার বাজার মাতিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সাউথ-কটন, মহিশূর সিল্ক, বেঙ্গালুরু সিল্ক, কোরা সিল্ক ও হরেক রঙের তসর।
শাড়ির পাশাপাশি, চাহিদা রয়েছে লং-স্লিম কুর্তি, চুড়িদার, নানা রঙের পাতিয়ালার। এ ছাড়া, পশ্চিমী পোশকের মধ্যে হাঁটুঝুল ফ্রক, স্ট্রাইপ টপও এ বার পাল্লা দিয়ে চলেছে বলে জানালেন শহরের অন্যতম বস্ত্র বিপণির কর্ণধার বিমল মেহারিয়া। তিনি বলেন, ‘‘অন্য বারের মতো এ বারও ট্র্যাডিশনাল পোশাকের পাশাপাশি, পশ্চিমী পোশাকেরও চাহিদা ভালই। তবে করোনার জন্য ভিড় কম।’’ পরিবারের সঙ্গে বাজার করতে এসেছেন তামসী চট্টরাজ। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর ফ্যাশন মানে একটু অন্য কিছু। তাই পশ্চিমী ধাঁচের পোশাকই পছন্দ আমার।’’
ফ্যাশনের দুনিয়ায় পিছিয়ে নেই পুরুষেরাও। যদিও পুরুষের ফ্যাশন বলতে ট্রাউজার, শার্ট বা পাঞ্জাবি। এ বার নানা ডিজাইনের চেক শার্টের কদর রয়েছে। ট্রাউজারের মধ্যে এ বারও জিন্সের বাজার ভাল। অনেকে আবার কার্গোর সঙ্গে ভি-নেক ফুলস্লিভ টি-শার্ট পছন্দ করছেন বলে জানালেন শহরের বস্ত্র ব্যবসায়ী মহম্মদ সাজিদ।
পোশাকের পাশাপাশি, এ বারও পুজোয় ট্র্যাডিশনাল সোনা-রুপোর গয়না তো আছেই। রয়েছে ইমিটেশনের গয়নাও। এক বিক্রেতা মণিদীপা সেন জানালেন, পুজোর সময় সাধারণত বোল্ড গয়নাই পছন্দ সকলের। সে কথা মাথায় রেখে পাথর বসানো নেকলেস বা কাঠ ও ঝিনুকের গয়নার সম্ভার রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সাদামাটা তো চলবে না। পুজোয় চাই, জমকালো গয়না। সকলের চোখে লাগা চাই।’’
কয়েকদিন আগে শিল্পাঞ্চলের একটি দোকানে এক মনে গয়না দেখছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী পায়েল দত্তগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো সোনা-রুপোর গয়না পরে রাস্তায় চলা যায় না। কিন্তু অলঙ্কার হিসেবে আধুনিক ডিজ়াইনের ইমিটেশনের গয়না মানায় ভাল।’’ শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গয়নার দোকান ঘুরে জানা গেল, সোনালি-রুপোলি বা তামাটে রঙের ধাতুর উপরে পাথর বসানো গয়নার বাজার খুবই ভাল। নেকলেস থেকে চুড়ি, টিকলি, আংটি, কানপাশা, ঝুমকো সবই মিলছে সাধ্যের মধ্যে। কাঠের তৈরি চওড়া বালা, রঙিন রেশম সুতোর চুড়ি, কাঠের পেনডেন্ট বসানো রেশম সুতোর তৈরি গলার চেনেরও খুবই কদর রয়েছে।
এখন অপেক্ষা পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে-মণ্ডপে কতটা জমে ওঠে ফ্যাশন-প্যারেড। (চলবে)