দুর্গাপুরের নানা এলাকায় এখনও চোখে পড়ছে এই সব ফ্লেক্স-ব্যানার। ছবি: বিকাশ মশান।
নীতি-আদর্শ নিয়ে বিস্তর লড়াই থাকতে পারে। তবে তৃণমূল, বাম-কংগ্রেস জোট বা বিজেপির মধ্যে বেনজির ঐক্য এক জায়গায়। দুর্গাপুর শহরে ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ আগে। কিন্তু সব দলেরই হোর্ডিং-ফেস্টুন-ব্যানার নজরে আসছে। হাত পড়েনি দেওয়াল লিখন সাফ করার কাজেও।
নির্বাচন ঘোষণা হতেই সবার আগে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। তার পরেই শহরের বহু জায়গা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল তৃণমূলের পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্সে। কিছু দিন পরে আসরে নামে বাকি দলগুলি। এর পরেই শুরু হয় টানাপড়েন। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের থেকে পতাকা, ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেওয়ার মতো নানা ঘটনা ঘটেছে। সরকারি জায়গাতেও ব্যানার-ফ্লেক্স, পতাকা টাঙানো হয়েছিল। সেগুলি খুলে দেয় কমিশন। তার পরে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি ঘটে। তবে ভোট মিটে যাওয়ার পরে এই সব ব্যানার-পোস্টার সরানোর দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলির। কিন্তু তারা তা না করায় শহরে দৃশ্যদূষণ হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
শহরবাসীর অভিযোগ, প্রচারের জন্য বাড়ির দেওয়াল থেকে শুরু করে দোকান-বাজার, গাছের ডাল, কিছুই বাদ যায়নি। বেনাচিতি, ভিড়িঙ্গি, সিটি সেন্টার, বিধাননগর, দুর্গাপুর স্টেশন এলাকা-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গিয়েছে, সব রাজনৈতিক দলেরই কিছু না কিছু প্রচার সামগ্রী রয়ে গিয়েছে। ফ্লেক্স, পোস্টার, কাপড়ের পতাকা, কাগজের পতাকার শিকল— কী নেই সেই তালিকায়।
শিক্ষক সুকুমার মুখোপাধ্যায়, জইনুল হকরা বলেন, ‘‘কমিশনের মডেল কোড অব কন্ডাক্ট (এমসিসি) সেল ভোটের আগে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে। সে ভাবেই যদি ভোটের পরেও এগিয়ে আসার সুযোগ থাকে তাহলে ভাল হয়। পরিবেশের স্বার্থে সব প্রচার সামগ্রী সরিয়ে শহরকে পরিচ্ছন্ন করা দরকার।’’ চিকিৎসক মিহির নন্দীর বক্তব্য, ‘‘ভোট মিটে গেলেই কেমন যেন খণ্ডহরের মতো পড়ে থাকে সব কিছু। রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট না হলে দিনের পর দিন থেকে যায় এ সব। দৃশ্যদূষণের একশেষ!’’ বাসিন্দাদের দাবি, ভোট মিটলেও ফল না বেরনো পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলি এ সব সরাতে খুব একটা উদ্যোগী হয় না। কারণ, তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভোট নিয়ে উত্তেজনা বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য এমন দাবির সঙ্গে সহমত নয়। সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল কমিটির পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, তাঁরা ব্যানার-ফ্লেক্স সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি ভোটের পরে নিয়ম করে আমরা প্রচার-সামগ্রী সরিয়ে ফেলার কাজ করি। এ বারও তা করছি। এখনও হয়তো কিছু রয়ে গিয়েছে। সেগুলিও সরিয়ে ফেলা হবে।’’ কংগ্রেসের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী জানান, এখনও তাঁদের দলের তরফে সে ভাবে উদ্যোগ শুরু হয়নি। তবে দ্রুত সব সরিয়ে ফেলার আশ্বাস দেন তিনি। একই আশ্বাস বিজেপির আসানসোলের জেলা অন্যতম সম্পাদক তথা এ বারের প্রার্থী কল্যাণ দুবে ও তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের।