রাজ্য সরকার এবং আচার্য তথা রাজ্যপালের বৈঠকের পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহার পদের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়। ফাইল চিত্র।
উপাচার্যের পুনর্নিয়োগ নিয়ে জটিলতা ছিল। তা কাটাতে রাজ্য সরকার এবং আচার্য তথা রাজ্যপালের বৈঠকের পরে ফেব্রুয়ারি মাসে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহার পদের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়। এই সময়ের মধ্যে সার্চ কমিটি তৈরি করে উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত শুক্রবার উপাচার্যের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়নি, আবার রাজভবন থেকে উপাচার্যের দায়িত্বও কাউকে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শিক্ষাকর্মী সকলেই মনে করছেন, এমন অবস্থা বেশি দিন চললে অচলাবস্থা শুরু হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী বলেন, ‘‘আচার্যের নির্দেশ মতো সিনিয়র অধ্যাপকদের নাম পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের নাম রাজভবন থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ তবে স্থায়ী উপাচার্য বাছার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে বলে বিকাশ ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের দাবি, দু’দিনের মধ্যেই প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হতে শুরু করেছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত দৈনন্দিন কাজের সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দিয়েছে পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরে।
ছাত্র ভর্তি থেকে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পোর্টালের মাধ্যমে হয়। সেই কাজ দেখাশোনা করে একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঁচ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে তাদের। ৫ জুনের মধ্যে পাওনা না মেটালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। আইনি সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি নিয়ে বিকাশ ভবনের পরামর্শ চায়। বিকাশ ভবন অর্থ বিষয়ক কমিটি এবং ইসি-র বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই বৈঠক হয়নি। ৫ জুনের মধ্যে পাওনা মেটানো যাবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। নতুন অস্থায়ী উপাচার্য অত টাকার দায়িত্ব নেবেন কি না, সেটাও প্রশ্ন। সব মিলিয়ে, কী হতে চলেছে বোঝা যাচ্ছে না।’’
উপাচার্য পদ ফাঁকা থাকলে পিএইচডি থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত সব বিভাগেই জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের প্রাক্তন এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এমফিল বা পিএইচ-ডির জন্য ইউএসজি ‘রিসার্চ এথিকস পেপার’ শুরু করেছে। জুন মাসে স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সিমেস্টার পরীক্ষা রয়েছে। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার ফলও বেরোবে। উপাচার্যের চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলে সব আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে বড় রকমের সিদ্ধান্তর জন্য আচার্যের কাছে ছুটতে হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে ঝড়ে তারাবাগের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল হয়ে গিয়েছিল। ছাত্রীদের হস্টেল চালু রাখতে ১৫টির মতো জেনারেটর ভাড়া করতে হয়। উপাচার্য প্রশাসনিক ক্ষমতায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। ফের এমন ঘটলে কী হবে, সে প্রশ্নও তুলছেন আবাসিকেরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বুটা) নেতা ভাস্কর গোস্বামীর দাবি, ‘‘মাথা না থাকলে যা যা হওয়ার, সেই সব সমস্যা দেখা দেবে এ বার।’’ পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম ও হুগলি জেলার ৬৪টি কলেজ, একাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। প্রাক্তন ডিন রমেন সর বলেন, ‘‘এত বড় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যহীন হয়ে থাকলে অসুবিধা হবেই। দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ হওয়া দরকার।’’