আসানসোল পুরসভা। ফাইল চিত্র।
শুক্রবার কলকাতায় বসছে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। বৈঠকে এ দিন আসানসোলের নতুন মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও অধ্যক্ষ কারা হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে তৃণমূল সূ্রের খবর। দলীয় সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে, এ দিন সন্ধ্যায় এই তিন পদের নাম ঘোষণাও করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এই পদে নিজেদের পছন্দের কাউন্সিলরদের বসানোর তদ্বির জানাতে কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ, এমনই দাবি স্থানীয় সূত্রে। তবে নতুন বোর্ডের শপথ গ্রহণ আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থাকলেও তা ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে।
আসানসোলের ১০৬টি ওয়ার্ডে ৯১টিতে জিতেছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, ফল ঘোষণার পরে মেয়র হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন অভিজিৎ ঘটক, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ বসু, তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই অবশ্য এ জল্পনায় আমল না দিয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই মেনে নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, অভিজিৎ, উজ্জ্বল ও অমরনাথ ইতিপূর্বে একাধিক বার পুরসভায় জিতেছেন। বাকি দু’জন এ বারই প্রথম কাউন্সিলর হয়েছেন। এর আগে কখনই তাঁদের সক্রিয় রাজনীতিতেও দেখা যায়নি। তবে, তপন পেশায় আইনজীবী এবং অমিতাভ আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ। সে সূত্রে এই দু’জনও শহরে যথেষ্ট পরিচিত মুখ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বারের ভোটে তৃণমূলের জয়ের মূল কান্ডারি রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক। জেলা নেতৃত্বের একাংশের দাবি, তিন পদে কারা বসবেন, তা নিয়ে মলয়ের মতামতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ঘটনাচক্রে, যাঁদের নাম নিয়ে আলোচনা চলছে বলে দাবি, তাঁদের মধ্যে অভিজিৎ হলেন মলয়ের ভাই এবং তপন হলেন মলয়ের দীর্ঘদিনের পেশাগত সহকর্মী। যদিও, মলয় এ সব তত্ত্বের কথা স্বীকার করেননি। তাঁর কথায়, “আমরা সবাই দলের সৈনিক। সব কিছু ঠিক করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
এই পরিস্থিতিতে আসানসোলের নতুন মেয়রের নাম নিয়ে শিল্পাঞ্চল জুড়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল সুত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত থেকে পুরসভার এক প্রবীণ কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় রয়েছেন শিল্পাঞ্চলের এক বিধায়ক। আবার বুধবার রাতেই দলের এক রাজ্য নেতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন কুলটি থেকে বিজয়ী এক প্রবীণ কাউন্সিলর। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালেই ওই রাজ্য নেতা কলকাতায় রওনা দিয়েছেন। শুক্রবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই তিনি কুলটির ওই প্রবীণ কাউন্সিলরের জন্য ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলতে চান বলে দাবি। যদিও তা মানেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়। তাঁর সংযোজন: “আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। শুক্রবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মেয়র, ডেপুটি মেয়র, অধ্যক্ষের নাম চূড়ান্ত করা হবে। সব ঠিক থাকলে এ দিনই নাম ঘোষণা হতে পারে।”
এ দিকে, শহরের বিশিষ্টরাও মেয়র পদে তাঁদের পছন্দের কথা জানাচ্ছেন। ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক শচীন রায় বলেন, “শিল্পাঞ্চলের উন্নতির জন্য এক জন তরুণ কর্মক্ষম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আমরা মেয়র পদে দেখতে চাইছি।” শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, “পরিবেশ সচেতন এবং সংস্কৃতিমনস্ক কাউকে আসানসোলের মেয়র করা হোক।”
তবে, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “দল রাজনৈতিক ভাবে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিকেই মেয়র করবে বলে আশা করি। ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা।”