নিজস্ব চিত্র।
তরুণ ফুটবল প্রতিভা তুলে আনতে ২০০২-এ দুর্গাপুরে গড়ে ওঠে ‘মোহনবাগান সেল ফুটবল অ্যাকাডেমি’। ডিএসপি-র টেগোর হাউসের ২৫টি ঘর নিয়ে চলছিল অ্যাকাডেমি। মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা ‘বকেয়া’ থাকায় সোমবার ঘরগুলি ‘সিল’ করে দেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে, অ্যাকাডেমির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মূলত মোহনবাগানের তৎকালীন সচিব অঞ্জন মিত্রের উদ্যোগে ২০০২ সালে দুর্গাপুরে অ্যাকাডেমি গড়ে ওঠে। তৎকালীন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় টেগোর হাউসের ২৫টি ঘর নিয়ে শুরু হয় অ্যাকাডেমির যাত্রা। মাল্টিজ়িম, অ্যাম্বুল্যান্স-সহ সব রকম পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। বিভিন্ন রাজ্য থেকে খুদে শিক্ষার্থীদের এখানে রেখে ফুটবলের পাঠ দেওয়া হয়। কখনও শ্যাম থাপা, কখনও জো পল আনচেরি’র মতো স্থায়ী কোচ তো ছিলেনই। মাঝেমধ্যে বিদেশি কোচ এনেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। অঞ্জনের জন্মদিনেই অ্যাকাডেমির যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাই প্রায় প্রতি বছর অঞ্জন নিজের ও অ্যাকাডেমির জন্মদিন পালন করতেন
দুর্গাপুরে এসে।
অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা গিয়েছে, অঞ্জন মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দেয় পরিচালন সমিতির সদস্যদের একাংশের মনে। এর পরে, করোনার কারণে বছর দু’য়েক হল শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৯-এর মার্চ থেকে কার্যত বন্ধ অ্যাকাডেমি। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেয়ারটেকার রাখা হয়।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। কর্তৃপক্ষের তরফে অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২ অগস্ট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, ১০ অগস্টের মধ্যে কেন উচ্ছেদ করা হবে না, সে কারণ দর্শাতে বলা হয়। কর্তৃপক্ষ আসেননি। ডিএসপি-র দাবি, এর পরে ২৬ অগস্ট ‘এস্টেট কোর্ট’ অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়, ২৯ নভেম্বরের মধ্যে সব সম্পত্তি বার করে নিয়ে প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করে দিতে হবে। তাঁরা তা করেননি বলে অভিযোগ। তাই এ দিন ঘরগুলির দখল নেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী, বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি নিলাম করা হবে বলে ডিএসপি-র তরফে জানানো হয়েছে।
অ্যাকাডেমির কেয়ারটেকার রঞ্জন সেন বলেন, “আমিও বহু দিন বেতন পাইনি। শুধু খাবারের টাকা পাই। এখানেই থাকি। আমার যাওয়ার কোনও জায়গা নেই!” অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, চিঠি দিয়ে আয়কর, হিসাব সংক্রান্ত কাজ এবং অ্যাকাডেমি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই অ্যাকেডেমি ‘সিল’ করে দেওয়া হল। অ্যাকাডেমির তরফে মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য আনন্দময় ঘোষ বলেন, “অ্যাকাডেমির যাত্রাপথে নানা কারণে বিঘ্ন এসেছে বার বার। তবু আমরা লড়ে গিয়েছি। এ বার, কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছিল। তা দেওয়া হল না।”