তুলকালাম: টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক আন্দোলনকারীকে। ডান দিকে,তখনও আতঙ্কের রেশ কাটেনি অভিভাবকদের। শুক্রবার দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র
বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে অভিভাবকদের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে উত্তেজনা ছড়ায় দুর্গাপুরের হেমশিলা মডেল স্কুলে। সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন অভিভাবকদের একাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চালায় করে বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ অভিযোগ মানেনি। চার জনকে আটক করা হয়েছে। অভিভাবকেরা বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন।
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে মাসিক টিউশন ফি বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। দু’মাসের জায়গায় আগাম তিন মাসের ফি জমা দেওয়ার নিয়ম হয়েছে। এক মাস দিতে দেরি হলে ৫০০ টাকা জরিমানা। বেড়েছে ভর্তি ফি-ও। এই সব অভিযোগে এর আগে একাধিক বার স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ। শেষবার ২৮ এপ্রিল স্কুলের পাশের রাস্তার গাছ ফেলে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। অবরোধ তোলার আর্জি জানিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন কমিশনারেটের ডিসিপি অভিষেক মোদী। সে যাত্রা মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
৩ মে মহকুমাশাসকের দফতরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা সে দিন জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু বিষয়ে দু’পক্ষ সহমত হয়েছে। প্রথমত, তিন মাসের নয়, আগের মতোই আগাম দু’মাসের ফি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রথম মাসে নয়, পরপর দু’বার ফি দিতে দেরি হলে তবেই ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তৃতীয়ত, বর্ধিত ফি কমানো বা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি বাতিল ও হ্রাসের বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই মতান্তর মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
কিন্তু, স্কুল কর্তৃপক্ষ বৈঠকে দেওয়া কথা রাখছেন না অভিযোগ তুলে এ দিন সকাল থেকে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন বেশ কয়েক জন অভিভাবক। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে অতিরিক্ত ফি এবং ডোনেশন নেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অথচ দুর্গাপুরের এই স্কুল এক তরফা ভাবে ফি ও অন্যান্য খরচ চাপিয়ে দিচ্ছে অভিভাবকদের উপরে। খবর পেয়ে দুর্গাপুর থানা থেকে পুলিশ আসে। রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলা যাবে না বলে পুলিশ জানিয়ে দেয়। এর পরেই অভিভাবকেরা স্কুলের গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও স্লোগান শুরু করেন।
প্রাথমিক বিভাগে ছুটির সময় উত্তেজনা চরমে ওঠে। বিক্ষোভের জেরে খুদে পড়ুয়ারা বাইরে বেরোতে না পেরে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। বাচ্চাদের নিয়ে আসা অভিভাবকেরাও তখন দুশ্চিন্তায়। পুলিশ জোর করে অভিভাবকদের সরাতে গেলে শুরু হয় দু’পক্ষের বচসা। অভিযোগ, এই সময় হঠাৎ কিছু পুলিশকর্মী লাঠি চালাতে শুরু করেন। তাতে একাধিক অভিভাবক জখম হন। এক অভিভাবিকার হাতেও লাঠির চোট লাগে। দুর্গাপুর থানার ওসি তীর্থেন্দু চক্রবর্তীকে ঠেলে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে দেখা যায়। এমনকী ডিসিপি-র সঙ্গে কথা বলার সময়ও এক মহিলাকে টেনে সরিয়ে নিতে দেখা যায় পুলিশকে। পুলিশ দুই অভিভাবক ও দুই অভিভাবিকাকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশের এমন ভূমিকায় ক্ষোভে আরও ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারী অভিভাবকেরা। তখন ওসি প্রশ্ন তোলেন, ‘ছোট ছোট শিশুদের কিছু হয়ে গেলে কে দেখবে?’ মহকুমাশাসক পরে বলেন, ‘‘দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। বেশ কিছু বিষয়ে জটিলতা কেটেছে আগেই। বাকিটাও আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।’’ পুলিশ জানায়, এ দিন সন্ধ্যায় আটক করা চার জন অভিভাবকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের অধ্যক্ষা অরুন্ধতী হোম চৌধুরী জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে আর টিউশন ফি না বাড়ানোর মতো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে স্কুলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও এভাবে স্কুলের সামনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘এ দিনের বিক্ষোভের পরে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’’