পড়ুয়াদের বরণ করা হচ্ছে। জামুড়িয়ার দামোদরপুর প্রাথমিক স্কুল। ওমপ্রকাশ সিংহ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে, বুধবার থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলায়ও সমস্ত শ্রেণির পঠনপাঠন হল শ্রেণিকক্ষে। জেলা জুড়ে ১,০১৩ প্রাথমিক ও ৩১২টি উচ্চ বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন হয়েছে। পড়ুয়াদের চকলেট ও বেলুন দেওয়া হয়। স্কুলে আসতে পেরে খুশি পড়ুয়ারাও। সর্বত্রই কোভিড-বিধি মেনে চলা হয়েছে বলে দাবি জেলা শিক্ষা দফতরের। পাশাপাশি, অভিযোগ উঠেছে, জেলার বেশ কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির চলায় এ দিন পঠনপাঠন হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা স্কুল কর্তৃপক্ষ।
জেলা স্কুল বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) দেবব্রত পাল ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পাল এ দিন আসানসোলের শীতলা প্রাথমিক, হিরাপুরের সুভাষপল্লি, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ধরমপুর প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শন করেন। পঠনপাঠন থেকে শুরু করে কোভিড-বিধি সম্পর্কিত নানা বিষয় খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
রানিগঞ্জের সিহারশোল প্রাথমিক স্কুলে দেখা গেল, স্কুল প্রাঙ্গণ বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক নির্মাল্য সেনগুপ্ত জানান, এ দিন ২৩৩ জনের মধ্যে ১৮০ জন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। অভিভাবক উজ্জ্বল নাথ বলেন, “ক্লাসঘরে পঠনপাঠন চালু হওয়ায়, বেশ খুশি হয়েছি।” পাণ্ডবেশ্বরের নবগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ দাঁ জানান, বুধবার ৮৮ শতাংশ পড়ুয়া ক্লাস করেছে।
একই চিত্র দেখা গেল দুর্গাপুর ও কাঁকসা এলাকার স্কুলগুলিতেও। এ দিন দুর্গাপুরের অঙ্গদপুর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে ১৬৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৫৩ জন উপস্থিত ছিল। প্রধান শিক্ষিকা কাকলি চন্দ মজুমদার জানান, প্রত্যেক পড়ুয়া মাস্ক পরে এসেছিল। সকলকে হাতশুদ্ধি দেওয়া হয়। নিয়ম মেনেই স্কুল শুরুর আগেই প্রার্থনা করানো হয় পড়ুয়াদের। দীর্ঘদিন পরে, স্কুলের চৌকাঠে পা রাখতে পেরে খুশি খুদে পড়ুয়ারা। দ্বিতীয় শ্রেণির বিধান বাদ্যকর, রোহিনী মণ্ডলরা বলে, “স্কুলে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।” স্কুলগুলিতে এ দিন মিড-ডে মিলে রান্নাও হয়েছে। পড়ুয়াদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল কাঁকসার স্কুলগুলিতেও।
স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুনীতি সাঁপুই ও স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দেবব্রত পালের দাবি, এ দিন সব স্কুলেই কোভিড-বিধি মেনেই পঠনপাঠন হয়েছে।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ২৮টি উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হয়েছে। তার মধ্যে রানিগঞ্জের পাঁচটি স্কুল রয়েছে। সিহারশোল রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, পঞ্চম থেকে একাদশ শ্রেণির ৮০ শতাংশ পড়ুয়া স্কুলে এসেছিল। শুধু দ্বাদশ শ্রেণির প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। রানিগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রতীম চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের কারণে এ দিন পঠনপাঠন হবে না, তা মঙ্গলবারই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
স্কুল খুলবে জেনেও, কেন এই কর্মসূচি করা হল? স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুনীতির দাবি, “বলা হয়েছিল, মাঠে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হবে। শ্রেণিকক্ষে পড়ানো হবে। পঠনপাঠন না হওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”