প্রতীকী চিত্র
রাজ্যের শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষেই প্রাথমিক স্তরের অন্তর্ভুক্ত হবে পঞ্চম শ্রেণি। জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদ সূত্রে খবর, পূর্ব বর্ধমানের ৯৬৭টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু হতে চলেছে। সে সংক্রান্ত বিস্তারিত তালিকাও এসেছে সংসদে। কিন্তু এই তালিকা নিয়েই মঙ্গলবার সংসদের রাজ্য দফতরে গিয়ে আপত্তি জানিয়েছে শাসক দলের সংগঠন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। ক্ষোভপ্রকাশ করেছে অন্য শিক্ষক সংগঠনগুলিও।
কিন্তু সমস্যাটা কোথায়? বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের অভিযোগ, তালিকায় দেখা যাচ্ছে, উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই এমন স্কুল, হাইস্কুল চত্বরেই থাকা প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠনের কথা বলা হয়েছে। আবার অভিযোগ, পরিকাঠামো থাকা স্কুলের নাম নেই তালিকায়। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি তপন পোড়েল বলেন, ‘‘প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি চালু করা নিয়ে গোটা জেলা জুড়েই নানা প্রশ্ন রয়েছে। ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে শিক্ষকদের মধ্যে। সে সব নিয়ে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুল সংসদে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়ে এসেছি।’’
শিক্ষক সংগঠনগুলি সূত্রে জানা যায়, ভাতারের মাহাতা পূর্বপাড়ার প্রাথমিক স্কুলে ১০৩ জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন এক জন শিক্ষক। অথচ, ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু করতে বলা হচ্ছে। মেমারি থানার সাতগেছিয়ার পশ্চিমচক্রের নবস্থা এলাকায় ন’টি স্কুলের আটটিতেই পঞ্চম শ্রেণি শুরুর নির্দেশ রয়েছে। অথচ, স্কুলগুলির অবস্থা ‘নিধিরাম সর্দারের’ মতো। কালনার মহিষাসুরমর্দিনী, শ্যামগঞ্জ প্রাথমিক স্কুলে বর্তমান পড়ুয়াদেরই ঠিক ভাবে বসার জায়গা নেই। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি শুরু হলে পড়ুয়ারা কী ভাবে বসবে, তা নিয়ে সংশয়ে শিক্ষকেরা। একই ছবি আউশগ্রামের গোপাল সাহা আদিবাসী, গোনরা প্রাথমিক স্কুলেও। ভাতারের খুরুল, কাপশোড় স্কুলেও পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। বর্ধমান সদর পশ্চিম চক্রের মামদেপাড়া, সিজেপাড়া স্কুলেও সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি রাধাকান্ত রায়ের অভিযোগ, “পরিকাঠামো থাকা স্কুল তালিকায় নেই। আবার, পরিকাঠামো, শিক্ষক নেই, এমন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু করার কথা বলা হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্যই বোঝা কঠিন।’’
শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, হাইস্কুল থেকে দূরে এবং পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও পঞ্চম শ্রেণির নির্দেশ পায়নি সদর পশ্চিম চক্রের দে’পাড়া, তালিত, নরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক স্কুল। ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার পাওয়ার পরেও পঞ্চম শ্রেণি থেকে দূরে রয়েছে কালনা উত্তর চক্রের বিদ্যাপাড়া আদিবাসী স্কুল। মঙ্গলকোটের শীতলগ্রাম থেকে কাটোয়ার চাণ্ডুলির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিকাঠামো থাকলেও পঞ্চম-তালিকায় জায়গা পায়নি।
শিক্ষক সংগঠনগুলির প্রশ্ন, এমন বিতর্কিত তালিকা তৈরি করল কে বা কারা? জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের সচিব তথা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) নারায়ণচন্দ্র পাল অবশ্য বলেন, “আমাদের কাছে স্কুলের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে সে তালিকা রাজ্যে পাঠানো হয়। সেখান থেকে নির্দেশিকা এসেছে।’’
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের নেতা স্বপন মালিক আবার নির্দেশিকা প্রকাশের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এমন সময়ে নির্দেশিকা জারি কেন? এখন কি পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হতে বাকি আছে!” অন্য শিক্ষক সংগঠনগুলিও মনে করছে, এ বছর প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হলেও বই পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে পড়ুয়ারা।