অ্যাপের কার্যকারিতা বোঝাচ্ছেন চন্দ্রশেখরবাবুরা। নিজস্ব চিত্র।
বছরখানেক আগে এক শীতের রাত। দূরপাল্লার ট্রেন ধরার জন্য সপরিবারে আসানসোল স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক কলেজ শিক্ষক। ট্রেন ঢোকার মুখে হঠাৎই নজরে পড়ে, প্ল্যাটফর্মে শুয়ে কাতরাচ্ছে এক পথশিশু। ট্রেন এসে পড়ায় সে দিন ওই শিশুটির জন্য কিছু করে উঠতে পারেননি তিনি। গোটা যাত্রাপথে শুধু মনে হয়েছিল, কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ফোন নম্বর থাকলে হয়তো খবর দিয়ে দিতে পারতেন। তারা চিকিৎসা করাতে পারত শিশুটির।
আসানসোলের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডুর মাথায় সেই থেকেই একটা ভাবনা ঘোরাফেরা করছিল। এক সহকর্মী ও দুই পড়ুয়ার সাহায্য নিয়ে কাজটা করে ফেলেছেন। বানিয়ে ফেলেছেন একটা অ্যাপ, ষেখানে মিলবে আসানসোল মহকুমার নানা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর। ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বৃদ্ধাশ্রম, কী নেই সেখানে!
মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল ‘আসানসোল ওয়েলফেয়ার’ নামে অ্যাপটির। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘এখনকার দিনে সবাই ব্যস্ত। তবু তার মাঝে সমাজের জন্য কাজ করতে চায় আজকের প্রজন্ম। এই অ্যাপ তাঁদের সেই কাজে সাহায্য করবে বলে মনে করি।’’ তিনি জানান, গুগুল প্লে-স্টোরে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে অ্যাপটি। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে সেটি ডাউনলোড করে নিলেই মিলবে বহু তথ্য।
কী আছে এই অ্যাপে? মোট ১১টি বিভাগে ১৫টি বিষয় রয়েছে। আসানসোলের ভৌগলিক অবস্থান, ইতিহাস, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো, পরিবহণ, খেলাধুলো, শিক্ষা ব্যবস্থার নানা তথ্য দেওয়া হয়েছে সেগুলিতে। শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্তে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৩০টি সংগঠনের তথ্য রয়েছে। মহকুমার চারটি চক্ষুদান ও দৃষ্টিহীনদের জন্য কাজ করা সংগঠন, সরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক, রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নাম, ফোন নম্বর থাকছে। প্রবীণ নাগরিকেরা কী ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান, কোথায় গেলে সেগুলি পাওয়া যাবে, শহরের বৃদ্ধাশ্রম—এই সব সংক্রান্ত তথ্যও এই অ্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে।
চন্দ্রশেখরবাবু জানান, শিশুশ্রম, অসহায় প্রবীণদের কোনও প্রয়োজন বা মাদকের নেশা থেকে কাউকে বাঁচানো, যে কোনও সাহায্যের জন্য বা তথ্য জানাতে এই অ্যাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। এই অ্যাপ তৈরিতে তাঁকে সাহায্য করেছেন তাঁর সহকর্মী সুজয় দাসমহাপাত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দুই পড়ুয়া সুমিত কুমার ও আকাঙ্খা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা জানান, চন্দ্রশেখরবাবুর সঙ্গে হাতে-হাত মিলিয়ে এই কাজ করতে পেরে খুশি হয়েছেন। আর চন্দ্রশেখরবাবু নিজে বলছেন, ‘‘স্টেশনে সেই রাতের কথা ভুলতে পারিনি বলেই এটা করতে পারলাম।’’