প্রতীকী ছবি।
গতবার পাশের হারে সামগ্রিক ভাবে পশ্চিম বর্ধমান জেলা রাজ্যের মধ্যে শেষ দিক থেকে পঞ্চম স্থানে ছিল। এ বারও পরিস্থিতি খুব একটা বদলেছে বলে মনে করছে না শিক্ষক সমাজের একাংশ। কেন বারবার এমন ফল, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে জেলায়।
গত বার মোট ৩৪ হাজার পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক দিয়েছিল এই জেলা থেকে। পাশের হার ছিল ৭৫.৩৮ শতাংশ। এ বার, ১৩,০৭৩ জন নিয়মিত (‘রেগুলার’) ছাত্র পরীক্ষা দিয়েছিল। কৃতকার্য, ৮০.৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ, রাজ্যে শেষের দিক থেকে তৃতীয় (পরে রয়েছে যথাক্রমে আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি)। ছাত্রীদের ক্ষেত্রেও অবস্থা খুব একটা ভাল কিছু নয়। জেলা থেকে ১৫,৯৯৫ জন নিয়মিত (‘রেগুলার’) ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল। কৃতকার্য, ৭৮.৪৪ শতাংশ। শতাংশের হিসেবে রাজ্যের মধ্যে শেষ দিক থেকে নবম।
পাশাপাশি, গত বছর মাধ্যমিকে জেলা থেকে মেধা তালিকায় একমাত্র স্থান পেয়েছিলেন (দশম) পানাগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের সায়ন্তিকা রায়। এ বারেও সেই ছবিটা বদলাল না জেলার। ২০২০-র মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় পশ্চিম বর্ধমানের প্রতিনিধি সেই এক জনই। আসানসোলের ঊমারানি গড়াই মহিলাকল্যাণ স্কুল থেকে অনুশ্রী ঘোষ রাজ্যে নবম হয়েছেন।
কিন্ত সামগ্রিক ভাবে টানা এমন ফল কেন? জেলার শিক্ষক সমাজের একাংশ মনে করছেন, রাজ্যের অন্য অনেক জেলার তুলনায় এখানে অভিভাবকদের গড় আয় বেশি। ফলে, বেশির ভাগই তাঁদের ছেলেমেয়েদের ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পাঠাচ্ছেন। বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি রায়ের অভিযোগ, ‘‘শিল্পাঞ্চলে বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রতি অভিভাবকের বিশ্বাস হারাচ্ছেন। চটকদার পদক্ষেপের বদলে, গঠনমূলক ভাবনাচিন্তা করতে হবে।’’ পাশাপাশি, বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির সামগ্রিক ভাবে কোথাও পরিকাঠামোগত সমস্যা থেকে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তার অবকাশ থাকছে বলে মনে করছেন রিনি সেন, সুমন সরকার-সহ জেলার অভিভাবকদের একাংশ।
ধারাবাহিক ভাবে এমন ফল কেন, সে বিষয়ে কারণ অন্বেষণ করা দরকার বলে মনে করছেন কাজী নিজামউদ্দিন, বরুণ ভট্টাচার্য প্রমুখ শিক্ষকেরাও।
তবে তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ভাবে শিক্ষক সংগঠন, কৃতী পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। ওই কমিটি বছরভর নানা শিবির আয়োজন করছে। আগামী দিনে নিশ্চয় ভাল ফল হবে।’’
গতবার ফল নিয়ে ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেও জেলা শিক্ষা দফতর ‘গভীর পর্যালোচনা’ করার কথা জানিয়েছিল। এ বারের ফলের পরে অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়ভিত্তিক ফলাফল এখনও মেলেনি। তা পেলে পর্যালোচনা করা হবে। সেই মতো পদক্ষেপও করা হবে। আশা করি, এর সুফল আগামী দিনে অবশ্যই পাওয়া যাবে।’’
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |