ফাইল চিত্র।
অরাজনৈতিকভাবে আয়োজিত নন্দীগ্রামে বিজয়া সম্মলিনী মঞ্চে ‘বিদ্রোহী স্বর’ শোনা গিয়েছিল তাঁর গলায়। নিজের রাজনৈতিক জীবনের উত্থানের প্রসঙ্গ তুলে দলের একাংশ নেতার বিরুদ্ধে পরোক্ষে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। যা নিয়ে শুভেন্দুর বিরোধী শিবিরের নেতা তথা বিধায়ক অখিল গিরি ও জেলা সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান তাঁর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন।
এমনিতেই বেশ কয়েক মাস ধরে শুভেন্দুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জোর জল্পনা চলছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। সেই জল্পনা আরও বেড়েছে তাঁকে ঘিরে জেলার দুই শীর্ষ নেতার কড়া প্রতিক্রিয়ায়। বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে আগামী ১০ নভেম্বর শহিদ স্মরণে নন্দীগ্রামের গোকুলনগর হাইস্কুল মাঠে সমাবেশ করার কথাও ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু। ফলে ১০ নভেম্বর শুভেন্দুর ওই সমাবেশের দিকে তাকিয়ে রাজ্যের রাজনীতিক মহল। বিরোধী বিজেপি তো বটেই, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও ওই সমাবেশ নিয়ে সতর্ক নজর রাখছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। এমন আবহে ১০ নভেম্বর শহিদ স্মরণে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সমাবেশ ঘিরেও ব্লক তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের অধিকারী পাড়ায় শহিদ বেদিতে মাল্যদান ও গোকুলনগরের কর পল্লিতে শহিদ বেদির প্রাঙ্গণে স্মরণসভা করেন শুভেন্দু। এতদিন ধরে ভূমিউচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নামে ওই কর্মসূচির আয়োজন হয়ে এসেছে। এবারই প্রথম গোকুলনগর হাইস্কুল মাঠে সমাবেশ হচ্ছে। প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি পদে রয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা জেলা সহ-সভাধিপতি শেখ সুপিয়ান এবং যুগ্ম-সম্পাদক পদে রয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের ও এসইউসি নেতা নন্দ পাত্র। বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকেই শুভেন্দু ১০ নভেম্বরের সমাবেশ আয়োজনে প্রতিরোধ কমিটির গোকুলনগর অঞ্চল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ দাসঅধিকারীকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। দলীয় সূত্রের খবর, সমাবেশের আয়োজনে স্থানীয় নেতা স্বদেশ দাসঅধিকারীকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। এজন্য মঙ্গলবার ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকও ডেকেছেন। সমাবেশের আয়োজনে সুপিয়ানকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। শুভেন্দু সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়াই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে দলের একাংশ।
দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি জেলা নেতৃত্ব নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মনসুরা বিবি এবং তাঁর স্বামী তৃণমূল নেতা শেখ শাহবুদ্দিনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও মনসুরা ও শাহবুদ্দিন সেই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেন। তৃণমূল ব্লক নেতৃত্বের একাংশ পরোক্ষে মনসুরা এবং শাহবুদ্দিনকে সাহায্য করে বলে অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে ব্লক তৃণমূলের অন্দরে চাপা কোন্দল চলছিল। শনিবার শুভেন্দুর বক্তব্যের বিরোধিতা করে সুফিয়ানের সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনায় ব্লক তৃণমূলে ফাটল আরও চওড়া হয়েছে। এ জন্যই ১০ নভেম্বর সমাবেশ আয়োজনে সুফিয়ানকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্রের খবর।
ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পালের অবশ্য দাবি, ‘‘প্রতি বছর ১০ নভেম্বর শহিদদের স্মরণে সভা আয়োজনের দায়িত্ব ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির গোকুলনগর অঞ্চল কমিটির হাতেই থাকে। এ বছর সমাবেশ আয়োজনের দায়িত্বও তাঁদের হাতেই রয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে সাহায্য করি। মঙ্গলবার প্রস্তুতি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে দলের নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ সুফিয়ানকেও ডাকা হয়েছে।’’ সুফিয়ান এ দিন বলেন, ‘‘বৈঠকের ডাক পেয়েছি। তবে বৈঠকের আগে এনিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’