প্রতীকী ছবি।
ছাত্র আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু তা যাতে ‘অশালীন’ পর্যায়ে না পৌঁছয়, তা-ও দেখতে হবে। শনিবার দুপুরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে কাদম্বরী হলে বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রদের এক সভায় এমনই পরামর্শ দিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী তথা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন প্রাক্তনী স্বপন দেবনাথ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যামল সাঁতরা।
কেন এমন বার্তা? বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের দাবি, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ভিতরে উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহাকে দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন পড়ুয়াদের একাংশ। আটকে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্তাও। অভিযোগ, উপাচার্যকে খোলা আকাশের নীচে চেয়ারে বসিয়ে তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘অশালীন’ মন্তব্য করা হয়। নানা রকম অঙ্গভঙ্গিও করেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের একাংশের অনুমান, এই বিক্ষোভের নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)।
আগামী ৯ ডিসেম্বর বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে ফের পড়ুয়া-বিক্ষোভ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ পুড়তে পারে। সূত্রের খবর, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি (পূর্ব বর্ধমান) স্বপন দেবনাথের দ্বারস্থ হন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরেই এমন সভার আয়োজন কি না, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা।
কৃষিমন্ত্রী আশিসবাবু সভায় বলেন, “পড়ুয়ারা তাঁদের দাবি নিয়ে আন্দোলন অবশ্যই করবেন। কিন্তু তা যেন মাত্রা না ছাড়ায়, তা-ও দেখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষার পরিবেশকে সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করছেন যেখানে, সেখানে অশালীন ঘটনা কাম্য নয়।’’ স্বপনবাবুও ওই সভায় বলেন, “উপাচার্যকে ঘেরাও করে গালিগালাজের ঘটনা বেদনা দেয়। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন হবে, কিন্তু তা যেন পদ্ধতি মেনে হয়। পড়ুয়াদের দাবির সঙ্গে আমরা অনেকটাই একমত, সে জন্য আমরা প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে সেই দাবিগুলির কথা জানাব।’’
পাশাপাশি, শিক্ষা ও পড়ুয়া স্বার্থে জনহিতকর নানা প্রকল্পগুলির সুবিধা সবাই ঠিক মতো পাচ্ছেন কি না, তা দেখতে বর্তমান পড়ুয়াদের গ্রামে যাওয়ার আহ্বানও জানান স্বপনবাবু। তিনি বলেন, “তিন দিনের শিবির করার কথা বলা হয়েছে। পড়ুয়াদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। নতুন মুখ গ্রামে গেলে মানুষের মনে ভরসা জাগবে বলে আমার বিশ্বাস।’’
যদিও মন্ত্রীদের এ সব ‘পরামর্শ’ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হয়, ‘আন্দোলন করা যাবে না, এমন বার্তা ছড়ালে সাধারণ পড়ুয়াদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আগেই পড়ুয়ারা গ্রামে গিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছেন।’