বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে মহসিন কলেজের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
কেউ পেয়েছেন ৮, কেউ ১২। কেউ আবার শূন্য। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হুগলি মহসিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের দাবি, চতুর্থ পত্রে (আন্তর্জাতিক তুলনামূলক শাসন ব্যবস্থা ও রাজনীতি) ‘অস্বাভাবিক’ নম্বর দেওয়া হয়েছে তাঁদের। মঙ্গলবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এ নিয়ে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। পরে উপাচার্য নিমাই সাহার কাছে স্মারকলিপি দেন।
উপাচার্যের আশ্বাস, “পুনর্মূল্যায়ণের জন্য আবেদন করার দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও পড়ুয়াদের বলা হয়েছে লিখিত আবেদন করতে। কর্ম সমিতির বৈঠকে আলোচনা করে ওই পড়ুয়াদের খাতা পুনর্মূল্যায়ণ করার নির্দেশ দেওয়া হবে।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নম্বর পাওয়ার নজির আগেও রয়েছে। বছর দু’য়েক আগেই একের পর এক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা কোনও বিষয়ে শূন্য পেয়েছেন, কেউ আবার মোট নম্বরের চেয়ে বেশি পেয়েছেন। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছেন পড়ুয়ারা। ওই আন্দোলন ভাঙার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো বন্ধ করে পড়ুয়াদের উপর হামলা চালনোরও অভিযোগ উঠেছিল কর্মচারীদের উপর। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়েছিল, মার্কশিট তৈরির সংস্থা বদলের জন্য প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। তাতেই এ রকম ভুল হয়েছে। এ বারও ইতিমধ্যেই মার্কশিট তৈরির সংস্থা বদলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালের দাবি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি সংস্থার বদলে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছেন তাঁরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে সংস্থা বদলের অনুমোদনও নিয়ে এসেছেন। তবে কোন বর্ষের পড়ুয়াদের মার্কশিট তৈরি করবে ওই সংস্থা সে ব্যাপারে সোমবার রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এরই মধ্যে মহসিন কলেজের ওই পড়ুয়ারা নম্বর নিয়ে ‘অসন্তুষ্টি’র অভিযোগ করায় অস্বস্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ফুলো ওঁরাও, শিল্পা রায়দের দাবি, “একে দশ মাস পর ফল বেরোল। তারপর খাতা খুলে দেখছি ৮, ১০, ১২ নম্বর। অনেকে আবার শূন্যও পেয়েছে। এক জন অনার্সের পড়ুয়া কখনও ওই রকম নম্বর পেতে পারে!” এরপরেই পড়ুয়াদের কয়েকজন তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করেন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় খাতাও দেখায়। নয়ন রায়, ডলি পাসোয়ান, মৌসুমী বৈরাগ্যদের দাবি, “সংস্কৃত-সহ অন্যান্য খাতায় দেখা যাচ্ছে পরীক্ষকরা প্রতিটি প্রশ্নের পাশে নম্বর দিয়েছেন। কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে তার চিহ্নও দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চতুর্থ পত্রের খাতায় পরীক্ষক স্রেফ মনগড়া নম্বর বসিয়ে দিয়েছেন। গোটা খাতায় একটা কালির আঁচড় পর্যন্ত নেই!”
উপাচার্যের যদিও দাবি, “ওই সব পড়ুয়ারা আমার কাছে কোনও খাতা দেখাননি। আমরা তাঁদের দাবি মেনে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ণের আশ্বাস দিয়েছি।’’ যদিও পড়ুয়াদের দাবি, উপাচার্যের কাছে খাতার প্রতিলিপি নিয়ে গেলেও তিনি দেখতে চাননি।