স্নেহের পরশ। নিজস্ব চিত্র।
খাতায়-কলমে তাঁর অবসর ৩১ মে। কিন্তু গরমের ছুটি এগিয়ে আসায় শনিবারই ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। ক্লাসের শেষে তাই প্রধান শিক্ষককে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভাসল আউশগ্রাম ১ ব্লকের উক্তা পঞ্চায়েতের গঙ্গারামপুর হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়ারা। তাঁকে বিদায় জানাতে স্কুলে ভিড় করেন প্রাক্তন পড়ুয়া থেকে অভিভাবকেরাও। পড়ুয়াদের ভালবাসায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ২৫ বছর ওই স্কুলে শিক্ষকতা করা শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ও।
স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ বলেন, “শুভঙ্করবাবু যখন প্রথম এখানে আসেন, তখন একটি ভাঙা ঘরে স্কুল চলত। তাঁর চেষ্টায় স্কুলের অনেক উন্নতি হয়েছে।’’ স্কুলের এক পড়ুয়ার মা তথা স্থানীয় উক্তা পঞ্চায়েতের সদস্য জয়শ্রী ঘোষ বলেন, “পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে ডেকে এনে পড়ানো, কেউ না এলে কেন আসেনি তা জানতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া, কারও কোনও সমস্যা হলে তার পাশে থাকা— এ ভাবেই আমাদের আপন হয়ে উঠেছিলেন শুভঙ্করবাবু। তিনি এলাকাবাসীর আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন। তাই তিনি আর স্কুলে আসবেন না শোনার পরে, স্বাভাবিক ভাবেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে সকলের।” স্কুলের মিড-ডে মিলে যুক্ত শিউলি দাস, পূর্ণিমা দাসেরা বলেন, “খুব ভাল ব্যবহার করতেন। সবার মন খারাপ। এই ভালবাসা সবাই পান না।”
স্থানীয় গলিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া সৌরভ দাস, অর্জুন দাস, সপ্তম শ্রেণির পায়েল দাস, প্রিয়াঙ্কা দেবনাথেরাও তাদের প্রিয় স্যরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। স্কুলের বর্তমান পড়ুয়া অর্জুন ঘোষ, রেণুকা দাস, কুন্তল দাসেরা বলেন, “স্যর আমাদের শুধুমাত্র পড়াতেন না, আমাদের সঙ্গে খেলাও করতেন। স্যরকে ছাড়া, বাকি দিনগুলি আমাদের খুব খারাপ লাগবে। তাই স্যরকে মাঝেমধ্যে স্কুলে আসতে বলেছি।’’
মঙ্গলকোটের উনিয়া গ্রামের বাসিন্দা শুভঙ্করবাবু বলেন, “পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের এই ভালবাসা পেয়ে আমি গর্বিত। বাকি জীবনটাও এই পড়ুয়াদের জন্যই দিতে চাই।” পড়ুয়াদের হাতে তিনি খাতা-পেন ও চকলেট তুলে দেন। পড়ুয়া ও অভিভাবকেরাও কেউ কেউ তাঁকে উপহার দেন।