স্কুল ছুটির পরে বাড়ির পথে। সোমবার দুর্গাপুরে নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুলে। ছবি: বিকাশ মশান।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী সোমবার পূর্ণ দিবস ক্লাস হল দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সোম থেকে শুক্রবার স্কুল শুরু হবে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে। ছুটি বিকেল সাড়ে ৪টেয়। সোম, বুধ, শুক্রবার দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার নবম ও একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন হবে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী স্কুলগুলিতে এ দিন পঠনপাঠন হয়েছে। দুই শ্রেণি মিলিয়ে এ দিন উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৩৩.৮৬ শতাংশ। দফতরের দাবি, সার্বিক ভাবে উপস্থিতির হার বেড়েছে। উপস্থিতির হার বাড়ানোর জন্য কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষা দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে সেই কাজও শুরু করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে জারি হওয়া নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী এ দিন শুধুমাত্র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা গেল কী ভাবে? জেলা স্কুল পরিদর্শক তিমিরবরণ জানা বলেন, “প্রতিটি স্কুলের ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’ আছে। তার মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্তের কথা অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, স্কুলগুলির তরফে ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” ফলে, এ দিন কোনও সমস্যা হয়নি বলে দাবি জেলা শিক্ষা দফতরের। স্কুল পরিদর্শক জানান, প্রতিটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করে বুঝিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে। পাশাপাশি, শনিবার ‘পিছিয়ে পড়া’ পড়ুয়াদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। পুরাতন এগারা হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির অভিভাবক পিঙ্কি নাথ, দশম শ্রেণির অভিভাবক কার্তিক মণ্ডল বলেন, “স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে নতুন নির্দেশিকার কথা জানতে পেরে, সেই মতো ব্যবস্থা নিয়েছি।”
রানিগঞ্জের পুরাতন এগারা উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল ২৩.১৭ শতাংশ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক গড়াই জানান, শনিবার এই উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। তিনি বলেন, “স্কুলে পড়ুয়াদের পাঠানোর জন্য ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’ তৈরি করে অভিভাবকদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এ বার প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি বোঝানো হবে।” তবে শনিবারের তুলনায় সোমবার তাঁদের স্কুলের পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার কমেছে জানিয়েছেন অণ্ডাল উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ২৪.৭১ শতাংশ পড়ুয়া উপস্থিতি ছিল। শনিবারের থেকে ১১ শতাংশ কমে গিয়েছে। কিন্তু কেন? প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার মণ্ডলের দাবি, নির্দিশিকা অনুযায়ী প্রথম দিকে অনেক আগে স্কুল চালু হয়েছিল। ফলে, অনেক পড়ুয়ার আসতে অসুবিধা হচ্ছিল। পরে সময় পরিবর্তন করার কথা অনেকে জানতে পারেনি। তার প্রভাব পড়েছে এ দিন।
আসানসোলের চেলিডাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলে এ দিন ৪৭ শতাংশ পড়ুয়া এসেছিল। রাজীব ও নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ, দু’জনেই জানান, তাঁরা পৃথক ভাবে শিক্ষা দফতরকে চারটি শ্রেণি ভাগ করে স্কুল চালু করা ও স্কুল শুরুর সময় পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। রাজ্য শিক্ষা দফতর তাঁদের সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, এ বার স্কুলে উপস্থিতির হার বেড়ে যাবে।
জেলার বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সদস্যেরা জানান, পড়ুয়াদের যাতে স্কুলে পাঠানো হয়, প্রয়োজনে প্রতি শনিবার অভিভাবকদের ডেকে বৈঠক করা হবে। যদি কারও কোনও সমস্যা থাকে, তা জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। জামুড়িয়ার সিদ্ধপুর বাগডিহা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্তনু ভট্টাচার্য বলেন, “প্রথম লকডাউনের আগে সপ্তম শ্রেণিতে যে পড়ত, সে এখন নবম শ্রেণিতে পড়ছে। এ ছাড়া এমন অনেক পড়ুয়া আছে, যারা দীর্ঘদিন নিয়মিত চর্চার অভাবে স্কুলমুখী হতে ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করছে, স্কুলে গিয়ে তাল মেলাতে পারবে না। তাদের চিহ্ণিত করে স্কুলমুখী করার অভিযানে নামা হবে।”