বাড়ি ফেরার পথে। বাঁ দিকে, আসানসোলে। ডান দিকে, দুর্গাপুর স্টেশন বাজার এলাকায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রখর থেকে প্রখরতর হচ্ছে গ্রীষ্মের দাবদাহ। পুড়ছে পশ্চিম বর্ধমান জেলাও। এই অবস্থায় বিকাশ ভবন সোমবার নির্দেশ দিয়েছে, গরমে সুস্থ থেকে পড়ুয়ারা যাতে স্কুলে যেতে পারে, সে জন্য প্রাথমিক, এসএসকে, এমএসকে থেকে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক— সব স্তরেই ‘মর্নিং স্কুল’ অর্থাৎ, সকালে স্কুল চালু করতে হবে। এই সিদ্ধান্তে খুশি পড়ুয়া থেকে অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে কবে থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হবে, সে নিয়ে ধন্দে পড়েছেন সবপক্ষ। কারণ, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত স্কুলগুলির কাছে ‘মর্নিং স্কুল’ চালু করার বিষয় সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি বলে জানান কর্তৃপক্ষ। যদিও সময় মতোই নির্দেশ পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা।
মঙ্গলবার আসানসোলের তাপমাত্রা প্রায় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করেছে, এমনটাই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বইছে গরম হাওয়া (‘লু’)। এরই মধ্যে স্কুলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। খুব প্রয়োজন ছাড়া, কেউ বাইরে বেরোচ্ছেন না।
এ দিন সকালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে দেখা গেল, প্রখর তাপে কাহিল হয়ে পড়েছে পড়ুয়ারা। তাদের স্কুল থেকে নিয়ে যেতে এসেছেন অভিভাবকেরা। এমনই এক জন আসানসোলের বড়তোড়িয়া অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের প্রসেনজিৎ রায় বলেন, “সকালে স্কুল চালুর সিদ্ধান্তে আমি খুশি। তবে আরও ভাল হয় গরমের ছুটি এগিয়ে নিয়ে এলে। কারণ, সকালের স্কুল বেলা ১১টায় শেষ হলে, চড়া রোদ মাথায় নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে পড়ুয়াদের।” খুদে পড়ুয়াকে আগাগোড়া সাদা তোয়ালে মুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কন্যাপুর প্রাথমিক স্কুলের এক অভিভাবক দীপ্তি বিশ্বাস। তিনি বলেন, “কবে থেকে স্কুল সকালে হবে, তা এখনও জানাননি কর্তৃপক্ষ। তবে আমি আর মেয়েকে স্কুলে পাঠাবো না ঠিক করেছি।”
এ দিন বিকেল পর্যন্ত সকালে স্কুল চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত পাননি বলে জানিয়েছেন বারাবনির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ উপাধ্যায়, ডিসেরগড়ের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজীব লায়েক। তাঁরা বলেন, “যে ভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভালই।”
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুনীতি সাঁপুই বলেন, “এ দিন বিকেল পর্যন্ত মর্নিং স্কুল চালুর কোনও সরকারি নির্দেশ হাতে আসেনি। তবে আমরা তৈরি আছি। যখন যেমন নির্দেশ আসবে, স্কুলগুলিকে জানানো হবে।”
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হচ্ছে। এর পরেই, ‘মর্নিং স্কুল’ চালুর নির্দেশিকা জারি করা হতে পারে। যদিও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের দাবি, সকালে স্কুল চালু করে বিশেষ লাভ হয় না। তার চেয়ে গরমের ছুটি এগিয়ে এলে, সব পক্ষের সুবিধা। কারণ, যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকা দূর থেকে আসেন, তাঁরা খুব সকালে যানবাহনের অভাবে সময়ে স্কুলে পৌঁছতে পারবেন না। ত ছাড়া, সকালে স্কুল চালু হলেও বেলা সাড়ে ১১টার আগে স্কুল ছুটি দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে, পড়ুয়াদের সেই তীব্র গরম সহ্য করেই বাড়ি ফিরতে হবে।
তবে নির্দেশ যা-ই হোক না কেন, তাপপ্রবাহ থেকে পড়ুয়াদের রক্ষা করতে কিছু সরকারি সতর্কতা স্কুলগুলিকে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা স্কুল পরিদর্শক সুনীতি সাঁপুই জানিয়েছেন। এগুলি হল— নির্দিষ্ট সময় অন্তর জলপান করা। দিনে হালকা ও ঢিলে পোশাক পরা, হালকা খাবার ও জলজ ফল খেতে হবে। ঘরে তৈরি লেবুজল বা সরবত পান করতে হবে। অসুস্থ হলে, দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।