Higher Secondary

Higher Secondary Exam: হোম থেকে হোমে ঘুরে পড়া, সাফল্য উচ্চমাধ্যমিকে

ট্রেন ছাড়ার মুখে কিছু একটা কিনতে যাওয়ার কথা বলে, মা-বাবা দু’জনই ট্রেন থেকে নামেন। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দেয়।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২২ ০৭:১৮
Share:

সালমা খাতুন। নিজস্ব চিত্র।

তখন বয়স পাঁচ কী ছয়। প্ল্যাটফর্মে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনাথ আশ্রমে প্রবেশ করার দিন থেকেই খুদে সালমা খাতুনের শুরু হয় নতুন জীবন। সেই খুদে সালমা এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগেপাশ করেছেন।

Advertisement

সোমবার মার্কশিট হাতে পান। জানা যায়, তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৩৫০ (‌সেরা পাঁচ বিষয়ের নম্বর)। বিষয়ভিত্তিক নম্বর হল— বাংলা ও ইতিহাসে ৭৫ করে, ইংরেজিতে ৪৬, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ভূগোলে ৬৭ করে এবং অর্থনীতিতে ৬৬। সালমা জানান, বাবা শেখ আলি হুসেন ও মা সালিমা বিবির সঙ্গে দিল্লিতে থাকতেন তিনি। তাঁর বাবা সকালে রাজমিস্ত্রির কাজ ও বিকালে রিকশা চালাতেন। মা ছিলেন গৃহবধূ। প্রায় ১৩ বছর আগে, মা-বাবার সঙ্গে দিল্লি থেকে দূরপাল্লার ট্রেনে উঠেছিলেন। ট্রেন ছাড়ার মুখে কিছু একটা কিনতে যাওয়ার কথা বলে, মা-বাবা দু’জনই ট্রেন থেকে নামেন। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দেয়। বাবার-মা খোঁজে কিছু ক্ষণ এ দিক-ওদিক তাকিয়ে আসনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তার পরে কেটে যায় অনেকটা সময়। টিকিট পরীক্ষকের ডাকে ঘুম ভাঙলেও, মা-বাবাকে আর খুঁজে পাননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের উদ্যোগে বর্ধমানের একটি বালিকা হোমে ঠাঁই হয় তাঁর।

সালমা জানালেন, বর্ধমানের ওই হোম কর্তৃপক্ষ তাঁর লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেন। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সেখানকার একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। সে ফলের পরেও থামতে চাননি সালমা। বলেন, “হোমের আধিকারিকদের কাছে আরও পড়ার আর্জি জানাই। কিন্তু ওই হোমে ১৬ বছরের বেশি বয়সিদের রাখার নিয়ম নেই। তাদেরই চেষ্টায় আসানসোলের একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।” সেখানেই তাঁর উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা শুরু।

Advertisement

সালমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল রেল স্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্র সালমার ‘আঞ্চলিক’ অভিভাবক হয়ে, তাঁকে রেলের বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। সালমার বিষয়ে জানার পরে, তৎকালীন আসানসোলের ডিআরএম সুমিত সরকার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার যাবতীয় খরচ বহণের প্রতিশ্রুতি দেন। এ ভাবেই চলতে থাকে তাঁর লেখাপড়া। বর্ধমান সমাজকল্যাণ দফতরের উদ্যোগে এ বছর জানুয়ারি মাসে তাঁকে মেমারি ব্লকের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে মিড-ডে মিল রান্নার চাকরি দেওয়া হয়। তাই পরীক্ষার আগেই সালমা সেখানে চলে যান। এক দিকে রান্নার কাজ। অন্য দিকে লেখাপড়া— দু’দিক বজায় রেখেই উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন সালমা। সোমবার মার্কশিট হাতে তিনি বলেন, “সকলের সহায়তায় এত দূর পৌঁছতে পেরেছি। আরও পড়তে চাই।” তাঁর প্রিয় বিষয় ইতিহাস। ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁরা।

বর্ধমান জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রশান্ত রায় বলেন, “সালমা আমাদের পরিচিত। প্রশাসন যথাসাধ্য পাশে থাকবে।” তিনি জানান, বর্ধমানের হোমে থাকাকালীন সালমার মা, বাবার খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। পশ্চিম বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিশু সুরক্ষা) সঞ্জয় পাল বলেন, “ওঁর সাফল্যে আমরা খুশি। পাশে আছি। ওঁর বাবা-মাকে খুঁজে বার করার চেষ্টা হবে।” আসানসোলের হোমের আধিকারিক সেরিনা মণ্ডলও সব সময় তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

“বাবা-মায়ের সন্ধান পেলে নিজের কাছে এনে রাখব”, বলেছেন সালমা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement