দুর্গাপুরের দোকানে। নিজস্ব চিত্র
নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ছ’বছর আগে। প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ছে এক বছর করে। কিন্তু আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে গুটখা বিক্রি বা কেনায় রাশ টানা যায়নি এখনও। কাল, বৃহস্পতিবার থেকে ফের এক বছরের জন্য রাজ্যে গুটখা বিক্রি বন্ধের নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নতুন নির্দেশিকায় পরিস্থিতি কতটা বদলাবে, তা নিয়েও সংশয়ে শিল্পাঞ্চলবাসী।
রাজ্যে প্রথম গুটখা বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধের নির্দেশিকা জারি হয় ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল। সে বছর ১ মে থেকে নিষেধাজ্ঞা বহাল হয়। এর পরে প্রতি বছর নির্দেশিকার মেয়াদ এক বছর করে বাড়ানো হচ্ছে। অথচ, শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার ধারে গুমটিতে ঝুলছে রকমারি রঙবেরঙের গুটখার প্যাকেট। নাবালক থেকে প্রবীণ, ক্রেতার তালিকায় রয়েছেন সবাই। একটু নজর রাখলেই দেখা যায়, এক সঙ্গে দু’রকমের একটি করে প্যাকেট কেনা হচ্ছে। এর পরে দু’টির ভিতরে থাকা সামগ্রী মিশিয়ে মুখে পুরছেন ক্রেতা।
বিক্রেতাদের দাবি, সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে আর গুটখা বিক্রি হয় না। আগে পানমশলা ও জর্দা এক সঙ্গে মিশিয়ে একটি প্যাকেটেই গুটখা হিসাবে বিক্রি হতো। এখন আর তা হয় না। বেনাচিতি বাজারের এক গুমটি মালিক বলেন, ‘‘আগে প্যাকেটের উপরে গুটখা লেখা থাকত। এখন আর তেমন প্যাকেট আসে না।’’ ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, দু’টি প্যাকেটের একটিতে থাকে জর্দা। অন্যটিতে থাকে পানমশলা। দু’টি আলাদা ভাবে কিনে মিশিয়ে তা সেবন করা হচ্ছে। ফলে, সরাসরি গুটখা বিক্রি না হলেও ব্যবহার চলছে রমরমিয়েই।
চিকিৎসকেরা জানান, মুখগহ্বরের ভিতরে এক ধরনের সূক্ষ্ম আবরণ থাকে। গুটখা তার উপরে ক্ষত তৈরি করে। প্রথমে অস্বাভাবিক সাদা-কালো দাগ হতে থাকে। এর ফলে, মুখের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন চলতে থাকলে তা থেকে ক্যানসার হতে পারে। শুধু মুখ নয়, গলা, পাকস্থলি, খাদ্যনালি, ফুসফুসেও ক্যানসার হতে পারে এর জেরে। তা ছাড়া, গুটখা খাওয়ার পরে থুথু ফেলার ফলে চারদিক নোংরা হয়। রাস্তাঘাট, দেওয়ালে গুটখার ছোপ দেখা যায় অনেক জায়গাতেই।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট ২০০৬’-এর উপরে ভিত্তি করে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গত ২৫ অক্টোবর ফের এক বছরের জন্য গুটখা বিক্রি ও সেবনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৬ জুন মহকুমা প্রশাসনের তরফে দুর্গাপুরে গুটখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তা সত্ত্বেও গুটখার কারবার চলছেই বলে অভিযোগ। মহকুমা প্রশাসন জানায়, মাঝে-মাঝে অভিযান হয়। স্কুল ও ব্লক স্তরে সচেতনতা শিবিরেরও আয়োজন করা হয়।
পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক, আসানসোলের মেয়র তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, গুটখা, পানমশলা ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির উপরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে দলের তরফে জেলার সাধারণ মানুষকে অবহিত করার উদ্যোগ হয়েছে। ব্লক সভাপতি ও দলীয় কর্মীদের শুক্রবার থেকে বুথ স্তরে এ বিষয়ে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।