কৃপাময় নন্দী। নিজস্ব চিত্র
আগামী ৫ এপ্রিল দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে আসানসোলের বিশেষ সংশোধানাগারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট কৃপাময় নন্দীকে। ইডি সূত্রে দাবি, গত ১০ বছরের ব্যাঙ্ক লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নিয়ে কৃপাময়কে হাজির হতে বলা হয়েছে। কিন্তু কেন এই তলব, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। বিরোধী নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করেছিলেন, গরু পাচার মামলায় ধৃত বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আসানসোলের সংশোধনাগারে থাকাকালীন বাড়তি সুবিধা, ফোন ব্যবহার করতে পেরেছেন। এর সঙ্গে কৃপাময়কে তলবের কোনও যোগ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তবে জেল কর্তৃপক্ষ কোনও দিনই এই অভিযোগে আমল দেননি।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ই-মেল করে কৃপাময়কে ডাকা হয়েছে। এর সত্যতা স্বীকার করে কৃপাময় বলেন, “ইডি ডেকেছে। ৫ এপ্রিল দিল্লিতে ইডি-র দফতরে দেখা করব।” তবে ব্যাঙ্ক লেনদেনের তথ্য নিয়ে উপস্থিত হতে হবে কি না, কেন ডাকা হয়েছে, এ সব বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কৃপাময়।
কিন্তু অনুব্রতের সংশোধনাগারে থাকাকালীন ফোন ব্যবহারের অভিযোগ এবং কৃপাময়কে ডাক, এই দু’টি বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজা হচ্ছে কেন? এ প্রসঙ্গে বিরোধী নেতৃত্ব স্মরণ করাচ্ছেন, গত মাসে বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখের একটি বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, “বিকাশ রায়চৌধুরী বলেছেন, উনি কেষ্ট’দার পরামর্শ মতো চলছেন। হয়তো বিকাশ’দার সঙ্গে কেষ্ট’দার জেল থেকে ফোনে কথাবার্তা হচ্ছে। সেই জন্য বিকাশ’দা বলতে পারছেন— এটা জেলা সভাধিপতির কথা। তাঁর ফোন চেক করলে বোঝা যাবে!” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গত বছর ডিসেম্বরে অভিযোগ করেছিলেন, সংশোধনাগার থেকে ফোন ব্যবহার করছেন অনুব্রত। যদিও, বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ বৃহস্পতিবার বলেন, “সংশোধনাগারে থাকার সময় কোনও দিনই ওঁর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তদন্ত যে ভাবে চলছে, চলুক।” তবে, এর পরেও, বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বক্তব্য, “আমরা অভিযোগ করেছিলাম, জেলবন্দি অনুব্রত তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা বলে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। জেল থেকেই তিনি বীরভূম জেলাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন। এখন জেলের আধিকারিককে তলব করার ফলে, পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।” যদিও, এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের অন্যতন রাজ্য সম্পাদক ভি শিবাদাসন।
এ দিকে, একটি সূত্রের দাবি, গত ৭ মার্চ অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার সময়ে, শক্তিগড়ের একটি খাবারের দোকানে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন দু’জন। কী ভাবে এমনটা ঘটেছিল, গত সাত মাস আসানসোলে থাকাকালীন অনুব্রতের সঙ্গে কারা, কখন দেখা করতে এসেছিলেন, এ সব বিষয়ও কৃপাময় নন্দীর কাছে জানতে চাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।