মলয় ঘকটকে দিল্লি ডাকার অনুমতি পেল ইডি। — ফাইল চিত্র।
কয়লা-পাচার কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজ্যের আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে দিল্লিতেই ডাকতে পারবে ইডি। দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি দীনেশকুমার শর্মা বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশের কথা সামনে আসতেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে আদালতের এই নির্দেশ কি পশ্চিম বর্ধমানে চাপে ফেলবে তৃণমূলকে। যদিও, তৃণমূল বিষয়টিতে আমল দিচ্ছেন না।
ঘটনা হল, কয়লা-পাচার কাণ্ডে অতীতে সিবিআই মলয়ের আসানসোল ও কলকাতার বাসভবনে তল্লাশি চালিয়েছিল। ইডি মন্ত্রীকে বেশ কয়েক বার ডেকে পাঠালেও, মলয় তাতে সাড়া দেননি বলেই অভিযোগ। এই জিজ্ঞাসাবাদের বিরোধিতা করে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন মলয়। তার প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার বিচারপতি মলয়ের আইনজীবীদের প্রশ্ন করেন, দিল্লিতে ইডির মুখোমুখি হতে মন্ত্রীর কী অসুবিধা। মলয়ের আইনজীবীরা দাবি করেন, তিনি রাজ্যের ব্যস্ত মন্ত্রী। দিল্লির পরিবর্তে তাঁকে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এ দিকে, ইডির আইনজীবী অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু দাবি করেন, মলয়কে ন’বার সমন পাঠানো হলেও, তিনি হাজির না হয়ে অপরাধ করেছেন। এর পরেই বিচারকের নির্দেশ, ইডি মলয়কে দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠাবে। তবে অন্তত ১৫ দিন আগে সমন পাঠাতে হবে। পাশাপাশি, আগে যে সমনগুলি পাঠানো হয়েছিল, তাতে হাজির না হওয়ায় দমনমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না ইডি।
এ দিকে, আদালতের এই নির্দেশ সামনে আসার পরেই তৃণমূলকে বিঁধেছে বিরোধীরা। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে’র প্রতিক্রিয়া, “যদি উনি কোনও অপরাধ না করে থাকেন, তা হলে এত ভয় কিসের। প্রথম বারেই হাজির হতে পারতেন। আসলে ওঁর নাম হয়তো কয়লা মাফিয়ারা বলে দিয়েছেন।” বিজেপির জেলা মুখপাত্র বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের আবার দাবি, “সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। ভোটের প্রচারে আমাদের মূল অস্ত্রই হবে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীদের দুর্নীতি।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “চিরকাল মানুষকে বোকা বানানো যায়না। আইনের কাছে এক দিন ধরা দিতেই হবে। স্বচ্ছ থাকলে ভয়েরকী আছে।”
যদিও, বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য মলয়কে ফোন করা হলেও তিনি উত্তর দেননি। রাত পর্যন্ত জবাব আসেনি মেসেজেরও। এ দিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “বিচারাধীন কোনও বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত।” তবে তাঁর সংযোজন: “বিরোধীদের উল্লসিত হওয়ার কিছু হয়নি। পঞ্চায়েত ভোটে এ সবের কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ, মানুষ বোঝেন, বিজেপি কী ভাবে এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের চাপে রাখার চেষ্টা করে। তবে এতে লাভ হবে না।”
কয়লা-পাচারের মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। এ পর্যন্ত ৪১ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছে তারা। গত বছরের শেষ থেকে কয়লা চুরির মামলার তদন্তে নামে ইডি-ও।