Jitendra Tiwari

দিনে লাড্ডু বিতরণ জেলায়, রাতে উলট পুরাণ

জিতেন্দ্রবাবুকে স্থানীয় বিজেপি নেতা, কর্মীরা যে দলে চাইছেন না, তা দাবি করেন দলের জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালেরা।

Advertisement

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট

আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০১
Share:

জিতেন্দ্র তিওয়ারির ছবি-সহ পোস্টার সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র।

এক পক্ষে, ‘উল্লাস’। অন্য পক্ষে, ‘আপত্তি’। জিতেন্দ্র তিওয়ারি আসানসোলের পুর-প্রশাসক এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদ ছাড়ার পরে শুক্রবার জেলায় দিনভর এমনই প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল যথাক্রমে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। এ দিন জিতেন্দ্রবাবুর ছবি-সহ পোস্টার সরিয়ে দেওয়া, মিছিল, লাড্ডু বিতরণ করতে দেখা যায় তৃণমূল নেতা, কর্মীদের একাংশকে। এ দিকে, জিতেন্দ্রবাবুর বিজেপি-তে জল্পনা প্রসঙ্গে প্রাথমিক ভাবে আপত্তি জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশও। রাতে, অবশ্য জিতেন্দ্রবাবু তৃণমূলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাওয়ার বার্তা দেন। এ-ও জানান, তিনি তৃণমূলেই থাকছেন।

Advertisement

জিতেন্দ্রবাবুর দল ছাড়ার ‘আনন্দে’ এ দিন সকাল থেকে আসানসোলের রাস্তায় মিছিল করেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের একাংশ। আসানসোলের হাটন রোড, আপকার গার্ডেন এলাকায় তৃণমূল অনুমোদিত ‘আসানসোল মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে মিছিলটি হয়। বাজি পোড়ানো, দলীয় কর্মীদের মধ্যে লাড্ডু বিতরণও হয়েছে। আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায় জিতেন্দ্রবাবুর ছবি-সহ শুভেচ্ছামূলক ব্যানার, ফ্লেক্স খুলে ফেলা হয় তৃণমূলের তরফে। সেই সঙ্গে, তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পাণ্ডবেশ্বরেও মিছিল করে তৃণমূল। নরেন্দ্রনাথবাবু এ দিন জিতেন্দ্রবাবুকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে কটাক্ষ করেন।

পাশাপাশি, এ দিন দুর্গাপুরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সগড়ভাঙা জোনাল সেন্টারে কালী মন্দিরে পুজো দেন তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের একাংশ। ছিলেন, কাউন্সিলর সুনীল চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি তথা ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিপুল সাহা প্রমুখ। এই ‘আনন্দ’-‘উল্লাস’ প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্যতম জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক পুরনো কর্মী বসে গিয়েছিলেন। এ বার সবাই নতুন উদ্যমে দল এগিয়ে যাবে।’’ যদিও, দলের অন্দরে জিতেন্দ্রবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত আসানসোল পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর ওয়াসিমুল হক বলেন, ‘‘রাজনীতিতে সবসময়েই সৌজন্য বজায় থাকা উচিত।’’ তবে, এ সব প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জিতেন্দ্রবাবু।

Advertisement

এ দিকে, জিতেন্দ্রবাবুর তৃণমূল ত্যাগের সঙ্গে তাঁর বিজেপি-তে যোগদানের জল্পনা জোরদার হয়েছিল জেলায়। যদিও, এ দিন কলকাতা রওনা হওয়ার আগে জিতেন্দ্রবাবু জানান, প্রয়োজনে তিনি তাঁর পুরনো পেশা, ওকালতিতেও ফিরে যেতে পারেন! তবে, ‘জল্পনা’ তীব্র হতেই আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইছেন। আমি তাঁদের আশ্বস্ত করছি। জিতেন্দ্রবাবুর নেতৃত্বে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপরে বহু আক্রমণ হয়েছিল, তা সবারই মনে আছে।’’ একই ভাবে, জিতেন্দ্রবাবুকে স্থানীয় বিজেপি নেতা, কর্মীরা যে দলে চাইছেন না, তা দাবি করেন দলের জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালেরা।

যদিও বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের এই ‘আপত্তি’ প্রসঙ্গে জিতেন্দ্রবাবু সকালে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন, ‘‘তৃণমূল করার সময়ে এমন অনেক কিছুই করতে হয়েছে, যা বাবুল সুপ্রিয়-সহ অন্যদের খারাপ লেগেছে। তাই তাঁরা এই মন্তব্য করছেন। এর বেশি কিছু বলার নেই।’’ তবে, এ দিন রাতের পরে তাঁর বিজেপি-তে যাওয়ার জল্পনাও আপাতত থামল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement