ফাইল চিত্র।
আগামী ২২ জানুয়ারি আসানসোল পুর-ভোট হতে পারে, বৃহস্পতিবার এই মর্মে কলকাতা হাই কোর্টে হলফনামা দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই, পুর-এলাকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথায় ভিন্ন আঙ্গিকে হলেও, উঠে এসেছে কলকাতা পুরভোটের প্রসঙ্গ!
সম্প্রতি হওয়া কলকাতা পুরভোটকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসানসোল পুর-এলাকায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম। উল্টো দিকে, দলের সাফল্য উদ্যাপনে বিজয় মিছিল করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল ও তার গণ-সংগঠনগুলিকে। ইতিমধ্যে, কমিশনের হলফনামা পেশের মধ্য দিয়ে, কলকাতার পরেই ওয়ার্ড সংখ্যার নিরিখে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরনিগম আসানসোলেও পুরভোটের দামামা বাজল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলি।
তবে বিরোধীদের কথায় বার বার উঠে আসছে কলকাতা পুরভোটের প্রসঙ্গ। যেমন, সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আসানসোল পুরভোটে জোরদার লড়াই হবে। শাসক দল সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা করতে পারে। আমরা তার মাটি কামড়ে মোকাবিলা করব।” ২২ জানুয়ারি, এটিকে ভোটের দিন হিসাবে নিয়ে কিঞ্চিৎ ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। দলের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “এটা উৎসবের সময়। ফলে, সাধারণ ভোটারেরা কতটা গোটা প্রক্রিয়ায় যোগ দেবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে কলকাতার মতো এখানে সন্ত্রাসের চেষ্টা হলে, সর্ব শক্তি দিয়ে লড়াই হবে।” বামেদের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে, দেবেশের দাবি, এ বিষয়ে এখনও কোনও প্রস্তাব সামনে আসেনি। এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাননি গৌরাঙ্গও।
২০১৯-এর লোকসভা, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে আসানসোল পুর-এলাকায় তৃণমূলের প্রধান বিরোধী বিজেপি। লোকসভায় আসানসোলের ১০৬টি ওয়ার্ডের ৯৯টিতে এবং বিধানসভায় ৬৬টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সে পরিসংখ্যানের কথা মনে করিয়ে দিয়েও পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেছেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট হলে এবং সাধারণ ভোটারেরা ভোট দিতে পারলে, আমরাই সফল হব।” বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের মন্তব্য, “আসানসোল পুরভোটে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাজ্য পুলিশ থাকলে, তারা যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে না, সেটা বলেই দেওয়া যায়। তবে আমরা তৈরি আছি।”
যদিও বিরোধীদের তোলা ‘সন্ত্রাসের আশঙ্কা’-কে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক অভিজিৎ ঘটক। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “পায়ের তলায় মাটি নেই বুঝে এখন থেকেই সন্ত্রাসের কাঁদুনি গাইতে শুরু করেছেন বিরোধী নেতৃত্ব।” তাঁর কথাতেও উঠে আসছে কলকাতার পুরভোটের প্রসঙ্গ! বলেন, “কলকাতার থেকেও আসানসোলে ভাল ফল করব আমরা।” এ দিকে, আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, ভোট যখন খুশি হতেই পারে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রস্তুত।
ঘটনাচক্রে, ২০১৫-য় নব কলেবরে তৈরি হওয়া আসানসোল পুরসভায় ওই বছরের পুর-ভোটে তৃণমূল, বামফ্রন্ট, বিজেপি ও কংগ্রেস জিতেছিল যথাক্রমে ৭৯টি, ১৬টি, আট ও তিনটি ওয়ার্ডে। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে ২০২০-তে, নানা দলবদলের পরে এই সংখ্যাটা দাঁড়ায় তৃণমূল ৯৩টি, বামফ্রন্ট ১০টি এবং বিজেপি তিনটি। কংগ্রেসের তিন জন কাউন্সিলরই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।