পেট্রল, ডিজ়েলে রাজ্যের ভ্যাট কমানোর দাবিতে মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
উপলক্ষ, পেট্রল এবং ডিজ়েল থেকে রাজ্যের তরফে ভ্যাট কমানোর দাবি। সে দাবিতেই মঙ্গলবার দুর্গাপুরের বেনাচিতির পাঁচ মাথার মোড় থেকে ভিড়িঙ্গি মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। আর সেই পদযাত্রার ভিড় কত হল, তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। উঠে আসছে, দিলীপের উপস্থিতিতে একই জায়গায় অতীতের অন্য একটি মিছিলের প্রসঙ্গও।
এই রাস্তায় বিধানসভা ভোটের আগে দিলীপ, শুভেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিংহ, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া-সহ এক ঝাঁক বিজেপি নেতৃত্ব মিছিল করেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের মতে, ভিড়ের চোটে আনন্দগোপাল সরণি কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। দু’পাশের বাড়ির ছাদেও ছিল না তিল ধারণের জায়গা। এ দিন দিলীপের পদযাত্রার পরে, তৃণমূলের কটাক্ষ, মেরেকেটে ভিড় হয়েছিল, শ’তিনেক লোকের। তৃণমূলের দুর্গাপুরের আহ্বায়ক মৃগেন্দ্রনাথ পাল বলেন, “হাতেগোনা কয়েক
জনকে নিয়ে বিজেপি শহরে পদযাত্রা করেছে। মানুষ যে ওঁদের পাশে নেই, সেটা এ দিন বুঝে গিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।” যদিও, দিলীপের বক্তব্য, “আবার নির্বাচন এলে দেখবেন, ভিড় কাকে বলে। এখন পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানোর জন্য লড়াই হচ্ছে।” যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানান, পুলিশের হিসাবে এ দিন প্রায় শ’চারেক লোকের
ভিড় হয়েছিল। এ দিনের পদযাত্রায় যোগ দেন দলের রাজ্য নেতা বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, দুর্গাপুরের কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। পদযাত্রা শেষে, ভিড়িঙ্গি মোড়ে সভা করা হয়।
এলাকার রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ভিড়ের হিসাব নিয়ে ‘তরজা’র নেপথ্যে থাকতে পারে আগামী দুর্গাপুর পুরভোটের ‘দামামা’ও। ঘটনাচক্রে, গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে দুর্গাপুরের ৪৩টি ওয়ার্ডের মাত্র ১৫টিতে এগিয়েছিল তৃণমূল। বাকিগুলিতে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। এই অঙ্কের কথা সামনে এনে লক্ষ্মণের প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূল বুঝে গিয়েছে, পুরভোটে হালে পানি পাবে না। তাই দু’টি পদযাত্রাকে গুলিয়ে দিতে চেয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।” যদিও, মৃগেন্দ্রনাথ পাল্টা বলেন, “বিধানসভা, লোকসভা বা পুরসভা— প্রতিটি ভোটের আলাদা চরিত্র রয়েছে। সেটা বোধহয় ভুলে গিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।”
পাশাপাশি, এ দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, “সব জিনিসের দাম বেড়েছে, কমেওছে। পেট্রল নিয়ে চিন্তা ছিল। সেটাও কমেছে। বাকি সবের দামও কমবে। কিন্তু দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কী করতে চান, তা দেখতে চাই আমরা।” তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায়ের যদিও প্রতিক্রিয়া, “বিজেপির এখন কেন্দ্রের কাছে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সরব হওয়ার কথা।”
এ দিকে, প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের মতে, এ দিনের পদযাত্রায় দিলীপ-সহ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশকে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি দীর্ঘ সময়। এ নিয়ে লক্ষ্মণ অবশ্য বলেন, “সবাই মাস্ক পরেই ছিলেন। কিন্তু মানুষের উদ্দীপনার জন্য মাঝেমধ্যে তা খুলতে হয়।”