রায়নার অর্ধনির্মিত বাণিজ্যিক ভবন। ছবি: উদিত সিংহ।
প্রায় দু’বছর আগে ব্যবসা করতে চেয়ে ঘরের জন্য অগ্রিম টাকা রায়নার ‘থানা কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার সোসাইটিকে’ দিয়েছিলেন শ্যামসুন্দর পঞ্চায়েতের কয়েক জন। কিন্তু এখনও বাণিজ্যিক ভবনটি তৈরি না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন ওই যুবকেরা। তৃণমূল পরিচালিত ওই সমবায় কর্মহীন যুবকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের দাবি, সবটাই অপপ্রচার।
ওই সমবায় সূত্রে জানা যায়, রায়নার শ্যামসুন্দরে প্রায় ৭৮ লক্ষ টাকা খরচ করে ভবনটি তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে বেশ কয়েকটি দোকান ঘর থাকবে। সমবায়ের অফিস ও গুদামও তৈরি হবে। লটারির মাধ্যমে ঘর দেওয়ার জন্য কয়েক জনকে বেছে নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে ১৭ জন সই করে জানিয়েছেন, সমবায়ের সমস্ত শর্ত মেনে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দোকান ঘরের অগ্রিম বাবদ দু'লক্ষ বা তারও বেশি টাকা দেওয়া হয়। সমবায় জানিয়েছিল, ঘরগুলির দাম তিন লক্ষ টাকা। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ঘর হস্তান্তরের সময়ে বকেয়া টাকা দিতে হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মাস কেটে গেলেও ঘর পাওয়ার আশা দেখা যাচ্ছে না, দাবি তাঁদের।
ওই যুবকেরা বলেন, ‘‘দোকানের টাকা জোগাড় করতে গয়না, জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে। তার জন্য সুদ গুণতে হচ্ছে। আবার টাকা আটকে থাকায় চিন্তাও বাড়ছে। জানি না দোকান পাওয়া যাবে কি না।’’ অনেকের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। ওই সমবায়ের ম্যানেজার সুজয় ঘোষের দাবি, ‘‘বোর্ড না থাকায় সমস্যা হয়েছে। স্পেশাল অফিসার দেওয়া হলেও তার মেয়াদ শেষের মুখে। এখন আবার ভোট চলে এসেছে। সেই কারণেই কাজ আটকে রয়েছে।’’
ঘটনাচক্রে, বেকারদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যে তৃণমূল পরিচালিত নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ওই সমবায়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, রায়না ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ পার্থসারথি বসু বলেন, ‘‘আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ঘর তৈরির প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সমবায় দফতর থেকে প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল।’’
পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলি বলেন, “যেখান থেকে পারো, লুট করো, এটাই তৃণমূলের মানসিকতা। এর বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’’ বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মানিক রায়ও বলেন, ‘‘নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়েই অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। এখন ঘর দিতে পারছি না, বলার অর্থই হল প্রতারণা করা।’’
তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক শৈলেন সাঁইয়ের যদিও দাবি, ‘‘বিরোধীরা যতই অপপ্রচার করুক, ঘর কেন হচ্ছে না সবাই জানেন। ভোট মিটলেই বিধায়ক আর সমবায় দফতরের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানো হবে।’’