বসানো হয়েছে সৌর প্যানেল। নিজস্ব চিত্র
মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য নদী পেরিয়ে আসতে হয় পাটুলি বাজারে। বিদ্যুৎহীন পূর্বস্থলীর পাটুলি পঞ্চায়েতের নতুন দামপাল ও নপাড়া চর এলাকার বাসিন্দারা এমনটাই জানান। তবে ওই দুই এলাকাতেই সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর।
ভাগীরথীর পাটুলিঘাট থেকে নদী পেরিয়ে যেতে হয় নতুন দামপাল এলাকায়। এই এলাকার গা ঘেঁষেই রয়েছে নপাড়া চর। দুই এলাকায় রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশোটি পরিবার। তবে এ পর্যন্ত ওই দুই এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগহীন। বাসিন্দারা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় নদী পেরিয়ে মোবাইল চার্জ দিতে যেতে তো হয়ই। পাশাপাশি, এলাকার পড়ুয়াদের পড়াশোনা করতেও সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি তাঁরা প্রশাসনের কাছে বারবার জানিয়েছেন। এমনকি, বিদ্যুৎ না থাকার প্রতিবাদে ভোট না দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এত দিন এ সব করেও লাভ হয়নি, আক্ষেপ বাসিন্দাদের। তবে নদী পেরিয়ে দূরত্বগত কারণে ও নদিয়ার দিক থেকেও কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ায় ওই দুই এলাকায় এত দিন আলো জ্বলেনি, দাবি বিদ্যুৎ দফতরের।
সম্প্রতি একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অধীনে ওই দুই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয় বলে বিদ্যুৎ দফতর জানায়। সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসানোর জন্য নতুন দামপাল এলাকায় পাঁচটি ও নপাড়া চরের দু’টি স্থানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, কিছু বাড়িতে মিটার বসানোর কাজও চলছে। গোটা ব্যবস্থাটি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে একটি ‘এজেন্সি’।
বিদ্যুৎ দফতর জানায়, সাতটি জায়গা থেকে মোট ১১৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। পরিকল্পনা রূপায়ণে খরচ হবে এক কোটিও বেশি টাকা। বিদ্যুৎ দফতরের কালনা শাখার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কৌশিক মণ্ডলের কথায়, ‘‘সব ঠিক থাকলে সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে কিছু বাড়িতে সৌর-আলো পৌঁছে দিতে পারব।’’ তবে ব্যক্তিগত ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও, এই মুহূর্তে শিল্প ক্ষেত্রে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। দফতরের কর্তাদের দাবি, ‘‘দু’দিন মেঘলা পরিবেশ থাকলেও ব্যাটারির মাধ্যমে এলাকা আলোকিত রাখা সম্ভব। তবে টানা মেঘলা পরিবেশ তৈরি হলে কিছুটা সমস্যা হবে।’’ জানা গিয়েছে, গলসির ভাসাপুরেও সৌর-বিদ্যুতের মাধ্যমে আলো জ্বালানো হবে।
দফতরের এই পদক্ষেপের কথা শুনে নতুন দামপালের বাসিন্দা বাবলু বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিদ্যুতের অভাবে সব দিক থেকেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এ বার যদি পুজোর আগে গোটা এলাকায় আলো আসে, তবে সেটাই হবে পুজোর সব থেকে বড় উপহার।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু চেষ্টা করেছি ওই দুই এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছনোর। তবে কিছু করা যায়নি। এ বার সৌর বিদ্যুতের কল্যাণে আলো জ্বলবে বাড়ি বাড়ি।’’
প্রশাসনের দাবি, জেলার মধ্যে এই দুই এলাকাতেই প্রথম সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলো পৌঁছবে ঘরে।