ছবি: সংগৃহীত
বাণিজ্যিক সংস্থার সাইনবোর্ডে বাংলায় নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, ঘোষণা করল আসানসোল পুরসভা। আগামি ১ জানুয়ারি থেকেই পুরসভার ১০৬টি ওয়ার্ডে এই নিয়ম চালু করা হবে বলে জানান শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। নিয়ম ভাঙলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আসানসোল পুরসভার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি। তাঁরাও এই পথে হাঁটবেন বলে দাবি করেন তিনি।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘দেশের একটি ভাষা থাকা প্রয়োজন, যাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে ভারতীয় ভাষা হিসেবে। যদি কোনও ভাষা দেশকে বাঁধতে পারে, তা হিন্দি।’’ এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। আসানসোলে বাংলাকে ব্রাত্য করার অভিযোগ তুলে নানা পক্ষ আন্দোলনেও নামে। রেলের বিভিন্ন দফতরের বোর্ডে বাংলায় লেখা নেই কেন, সেই প্রশ্ন তোলে ‘বাংলা পক্ষ’ সংগঠন। শহরের নানা দোকানপাট ও বাণিজ্যিক সংস্থার সাইনবোর্ডেও বাংলায় লেখার দাবি উঠছিল অনেক দিন ধরে। বিভিন্ন সংগঠনের তরফে এ নিয়ে মেয়রের কাছে দাবিদাওয়া জানানো হয়েছে।
যদিও মেয়র এ দিন জানান, কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে নয়, কাউন্সিলরেরা এ বিষয়ে সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘১ জানুয়ারি থেকেই পুরসভার সব ওয়ার্ডে এই নিয়ম চালু করা হচ্ছে। আশা করি, সবাই এই নিয়ম মেনে চলবেন।’’ তিনি জানান, সাইনবোর্ডে অন্য যে কোনও ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে, তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তার সঙ্গে অবশ্যই বাংলাকে ঠাঁই দিতে হবে। শিল্পাঞ্চলে নানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আছে। রয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারের দফতর। সেই সব সংস্থা ও অফিসের সাইনবোর্ডেও বাংলায় লেখার অনুরোধ জানাবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেউ ‘ট্রেড লাইসেন্স’ নিতে বা পুনর্নবীকরণ করাতে এলে পুরসভার এই সিদ্ধান্ত মানার বিষয়ে লিখিত সম্মতি দিতে হবে।
আসানসোল পুরসভার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আমি অনুপ্রাণিত। আসানসোলের মেয়রের দেখানো পথে আমরাও হাঁটার সিদ্ধান্ত নেব।’’ তাঁর মতে, এর ফলে সাধারণ নাগরিকেরা সহজে প্রতিষ্ঠানের নাম পড়তে পারলে সব পক্ষই উপকৃত হবেন। পুরসভার সিদ্ধান্তে খুশি ‘আসানসোল বাংলা অ্যাকাডেমি’র সভাপতি রামদুলাল বসুও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেক আগেই পুরসভার কাছে এই আবেদন জানিয়েছিলাম। অন্য ভাষায় আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সে সবের সঙ্গে বাংলাতেও লিখতে হবে।’’ ‘আসানসোল সাহিত্যপ্রেমী লেখক কবি সমাবেশ’-এর সম্পাদক অরুণাভ সেনগুপ্তের মতে, বাংলার প্রতি পুরসভার এই সম্মান ভাষাকে সমৃদ্ধ করবে।