কর্মীদের বাড়িতে মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় তিন বছর পরে কুনুর নদী পার করে পশ্চিম মঙ্গলকোটে কর্মসূচি করলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। রবিবার বিকেলে ‘ভুয়ো’ মামলায় জেলে আটকে থাকে চার জনের বাড়ি গিয়ে পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্থানীয় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকের পরে জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গেও দেখা করেন। মঙ্গলকোটের তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “উনি এলাকার বিধায়ক হিসেবে মঙ্গলকোটে আসবেন এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কোথাও বৈঠক করেছেন বলে মনে হয় না। কর্মী পাবেন কোথায়!”
কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে ভুয়ো মামলায় তৃণমূলের কর্মীদের আড়াই-তিন বছর ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, বেশির ভাগ জনের ক্ষেত্রে পুলিশের সাক্ষী আটকে থাকায় বিচার প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। এ দিন বিকেলে তিনি পশ্চিম মঙ্গলকোটের চাকদা গ্রামের তিন জনের বাড়ি যান। কথা বলেন এলাকার লোকজনের সঙ্গেও। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘ভুয়ো মামলায় আটকে থাকা তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে এক জন ইতিহাসে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ রয়েছেন। প্রত্যেকের ছোট ছেলে-মেয়ে রয়েছে। আমার কারণে কেউ অকারণে জেলে রয়েছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখের।’’ ওই কর্মীদের বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি নারায়ণপুরে জনজাতি পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করে সাহায্য করেন তিনি।
ওই এলাকায় বিধায়কের দেখা মেলে না বলে এর আগে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দলের অন্দরেও বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছে। এত দিন পরে মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে গ্রামের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা রেখে সিপিএম ছেড়ে তাঁরা ২০১১ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তাঁরা মন্ত্রীর সঙ্গে থাকায় তাঁদের ‘ভুয়ো’ মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। তার ফলে, এই এলাকায় বিজেপির প্রভাব বাড়ছে। মঙ্গলকোটে ১৩৩টি বুথে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিম মঙ্গলকোটেরও বেশ কিছু বুথ রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “ভুয়ো ও মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক কারণে আটকে থাকা কর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবি করেছি। মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হচ্ছে। গড়িমসি করলে বিধায়ক হিসেবে আমার মুখ পুড়বে।’’ কয়েক দিন আগে বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল মঙ্গলকোট তিনটি অঞ্চল নিয়ে বুথভিত্তিক সম্মেলনে এসে দাবি করেছিলেন, মন্ত্রী ঠিক কথা বলছেন না। আজ, সোমবার মাজিগ্রামে ফের একটি বুথভিত্তিক সম্মেলনে হাজির থাকার কথা তাঁর।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম মঙ্গলকোটের কাশেমনগরে যাওয়ার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন মন্ত্রী। আটঘড়া মোড়ে মহিলারা ঝাঁটা হাতে মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা চালান বলে অভিযোগ। পিছনে একদল পুরুষও লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই দিনের পর থেকে ওই এলাকায় কোনও কর্মসূচি করেননি বলে মন্ত্রী রবিবার জানান। তাঁর দাবি “ওই ঘটনার পর থেকে পশ্চিম মঙ্গলকোটে আমি আর কোনও কার্যকলাপ করিনি।’’ যদিও অপূর্ববাবুর দাবি, এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী কুনর নদী পার করে প্রতি মাসেই মঙ্গলকোটে যাতায়াত করেন।
বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের কটাক্ষ, “সাড়ে চার বছর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কেটেছে। এখন ভোট আসছে বলে কর্মীদের মনে পড়েছে তৃণমূলের।’’