বাসের অপেক্ষায়। বর্ধমানের আলিশা বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: উদিত সিংহ
অন্য বার মাসখানেক ধরে ২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি চলে। এ বার পঞ্চায়েত ভোট সদ্য মেটায় খানিকটা ক্লান্তি রয়েছে নিচুতলার কর্মীদের। কিন্তু জেলার নেতারা প্রায় ৯০ হাজার মানুষ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষকে রেলপথে আনা হবে বলে ঠিক হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বহু বাস। ফলে সোমবার থেকে শুরু হওয়া বাস-বিভ্রাট বুধবার কার্যত চরমে পৌঁছেছে।
বর্ধমানের দু’টি বাসস্ট্যান্ড, আলিশা ও নবাবহাটে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা অপেক্ষায় রয়েছেন। বাস প্রায় নেই। বর্ধমান-বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আরামবাগ রুটের সঙ্গে নবাবহাট থেকে বীরভূম, কাটোয়া, কালনা বা আসানসোল রুটের বাসও প্রায় ছিল না বললেই চলে। যাত্রীদের দাবি, অন্য দিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট অন্তর বাস থাকে। এ দিন তিন ঘণ্টা পরে বাস মিলেছে। আউশগ্রামের বাসিন্দা শেখ আজাদ বলেন, ‘‘ব্যবসার জিনিস কিনতে বর্ধমান এসেছিলাম। দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস পাইনি।’’ বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে আসা রীনা কর্মকারও দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পরে বাস পান। সগড়াইয়ে কাজে যাওয়া সুব্রত ঘোষ আবার বাস না পেয়ে মোটরবাইকে অফিসে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, ২১ জুলাইয়ের পরে আবার বাসে ফিরবেন। বাস না পেয়ে ঘুরপথে হলেও ট্রেনেও আসাযাওয়া করেন অনেকে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের অভি সরকার চাকরির পরীক্ষা দিতে বর্ধমানে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মঙ্গলবার অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও বাস পাইনি। বুধবার তাই বাঁকুড়া থেকে ট্রেন ধরে মশাগ্রাম, সেখান থেকে বর্ধমান লোকাল ধরে গন্তব্যে পৌঁছই।’’
জেলা বাস অ্যাসোসিয়েশনে পক্ষে তুষার ঘোষ জানান, আলিশা থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর রুটের প্রায় আড়াইশোটি বাস চলে। নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে কাটোয়া, কালনা, গুসকরা রুটের প্রায় দেড়শো বাস চলে। বুধবার প্রায় ৫০ শতাংশ বাস তুলে নেওয়া হয়েছে বলে সংগঠনের দাবি। বর্ধমান থেকে দক্ষিণ দামোদর হয়ে আরামবাগ বা বাঁকুড়া রুটের বাসই বেশি তোলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে যাত্রীদের ধারণা। জেলা পরিবহণ আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘কত বাস নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে কোনও তথ্য এখনও আমাদের হাতে আসেনি।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুথস্তর পর্যন্ত সভায় লোক নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থকই যাবেন ট্রেনে। এক একটি বুথ থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন লোক নিয়ে যাওয়া হলেই পঞ্চায়েত থেকে সাড়ে চারশোর উপরে লোক হবে, দাবি তাঁদের। পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার পাওয়া মহিলাদের মধ্যে সমাবেশে যাওয়ার আগ্রহ রয়েছে। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আমিও লোকাল ট্রেনে যাব।’’ দেবীপুর, বৈচি, পাণ্ডুয়া, কালনা, গুপ্তিপাড়া থেকে অনেকেই ট্রেনে যাবেন। ওই দিন আবার মেন লাইনে কিছু কাজ হওয়ার কথা। তাতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন হবে কি না, তা নিয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা।
নেতাদের দাবি, বাস পিছু ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। ট্রেনে গেলে খরচ কিছুটা বাঁচে। বাসে গেলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় পুলিশ পার্কিং করে দেয়। বেলা বাড়লে সেখান থেকে সভাস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না অনেকে। আবার জাতীয় সড়কে কাজ হওয়াই প্রচুর বাস গেলে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জানকীরঞ্জন সিংহ বলেন, ‘‘রায়না, খণ্ডঘোষ-সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে শেষ মুহূর্তে প্রচুর বাস নেওয়া হয়। এ বার এখনও পর্যন্ত ঠিক কত বাস নেওয়া হবে, তা স্পষ্ট নয়।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২১শে জুলাইয়ের সমাবেশে জেলা থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ যোগ দেবেন। জাতীয় সড়কে কাজ চলায় বেশির ভাগ কর্মী, সমর্থকদের ট্রেনে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’ নেতাদের দাবি, সমাবেশে যাঁরা যাবেন, তাঁদের কোথাও ট্রেনে ওঠার আগে খাবার, জল দেওয়া হবে। কোথাও আবার টাকা দেওয়া হবে। পূর্বস্থলী ১ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মী, সমর্থকদের বাড়ি থেকে মাথা পিছু চারটি করে রুটি এবং আলুভাজা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।
তবে তৃণমূলের যে অংশের লোকজন এ বার পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাননি, তাঁদের সবাই কলকাতায় সভায় যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলের অন্দরেই। তার সঙ্গে বৃষ্টি কতটা বাধা হবে, সেটাও চিন্তার।