বাম ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভ বর্ধমান থানায়। নিজস্ব চিত্র।
আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত বর্ধমানের তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সে কারণে তারা ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছে বলে দাবি করেছে মৃতার পরিবারও। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার বর্ধমানের পথে নামে সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠন। বর্ধমানের জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘তদন্তে প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা এলাকার তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতার ‘অনুগামী’। সে জন্য প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই ওই নেতা ও তাঁর সঙ্গীরা তাঁদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাঁদের বাড়ির কাছে কুরুচিকর ছবি এঁকে তাঁদের আত্মহত্যা করতে হবে বলে হুমকিও দেন। বুধবার ভোটে জেতার পরে, ওই নেতা ও তাঁর সঙ্গীরা বাড়িতে চড়াও হয়ে বোমা ফাটান। ওই তরুণী ও তাঁর এক দিদিকে মারধর করে শ্লীলতাহানি করেন বলেও অভিযোগ। তা সহ্য করতে না পেরেই ওই তরুণী গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
পরিবারের তরফে সদ্য জয়ী তৃণমূল প্রার্থী-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। বৃহস্পতিবার পুলিশ চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও, নেতাকে ধরেনি। এ দিনও বাকিদের না ধরায় ক্ষুব্ধ মৃতার পরিজনেরা।
মৃতার এক দিদি এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘অভিযুক্ত নেতা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। অবলম্বে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। না হলে, আমাদেরও আত্মহত্যা করতে হবে। আমরা তৃণমূল করি, তা-ই করব। কিন্তু যথাযথ বিচারের জন্য সবার কাছে সাহায্য চাইছি।” হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে ওই নেতা দাবি করেছেন, ‘‘আমিও ঠিকঠাক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। দরকারে সিআইডি তদন্ত করুক। সত্য প্রকাশ্যে আসুক।”
অভিযুক্ত নেতাকে কেন ধরা হচ্ছে না? ডিএসপি (সদর) অতনু ঘোষাল বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে।
ওই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার ‘ইনসাফ চাই’ স্লোগান তুলে, এ দিন বর্ধমানের কার্জন গেটে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং এআইডিডব্লিউএ। পরে, মিছিল করে বর্ধমান থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয় সংগঠনগুলি। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অভিযুক্ত নেতা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁকে-সহ সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে।’’
পুরুলিয়ার ঝালদার বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি নেপাল মাহাতো এ দিন দুপুরে দলের জেলা নেতাদের নিয়ে মৃতার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরিবারকে অর্থ সাহায্যও করা হয়। নেপাল বলেন, ‘‘আমরাও সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে, প্রয়োজনে আমরাও আইনের সাহায্য নেব।’’
বিজেপির বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক কল্লোল নন্দন দাবি করেন, ‘‘কয়েক দিন আগে ওই ছবি আঁকা হয়। পুলিশ মুছে দিতে বললেও, ওই তৃণমূল নেতার এতই ঔদ্ধত্য, যে সে কথা মানা হয়নি। তাঁকে কি আর পুলিশ ধরবে?’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছবিটা মুছে দিলে, পরিবারটির উপরে মানসিক চাপ তৈরি হত না। প্রশাসনের উচিত কেন এ রকম হল, তার জন্য ওই নেতার কাছে জবাব চাওয়া।’’ যদিও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘ওই ছবি আমরা আঁকিনি। পুলিশ আমাদের মুছতে বলবে কেন?’’