DSP Eviction Notice

উচ্ছেদ নোটিস, সঙ্কটে শহরের যৌনকর্মীরা

এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রথমে যৌনকর্মীদের মাত্র তিনটি পরিবার ছিল। ধীরে-ধীরে বাড়তে বাড়তে এখন তা প্রায় আটশো হয়েছে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩১
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) উচ্ছেদ নোটিস নিয়ে ইতিমধ্যেই শহরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছেন। চড়ছে রাজনৈতিক তরজার পারদও। এই উচ্ছেদ নোটিসের জেরে এ বার অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে দুর্গাপুরের কাদা রোডে থাকা প্রায় ছ’দশকের যৌনপল্লি। স্বেচ্ছাসেবী স‌ংস্থা ‘দুর্বারের’ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে প্রায় আটশো যৌনকর্মী রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা কোথায় যাবেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন যৌনকর্মীরা।

Advertisement

ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানা সম্প্রসারণের জন্য এএসপি মোড় লাগোয়া বস্তি, গেট নম্বর ২ এলাকা, তামলা ব্রিজ, ফরিদপুর বস্তি, পলাশডিহা, ভিড়িঙ্গি রোড, চাষিপাড়া, মেন গেট, কাদা রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায় জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ নোটিস পাঠানো হয়েছে। ধাপে-ধাপে এলাকা ধরে-ধরে বাসিন্দাদের শুনানিতে ডাকা হচ্ছে। প্রতিটি শুনানির দিনেই সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা ডিএসপি-র নগর প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপযুক্ত পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। গত ১৪ অগস্ট মেন গেট ও কাদা রোড এলাকার বাসিন্দাদের শুনানিতে ডেকেছিলেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা তৃণমূল নেতা ধর্মেন্দ্র যাদবের নেতৃত্বে এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা সে দিন বিক্ষোভ দেখান।

জানা গিয়েছে, কাদা রোডের যৌনপল্লি যে ওয়ার্ডে, সেই ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটাই রয়েছে ডিএসপি-র জমিতে। যৌনকর্মীদের অনেকেরই পরিবার নিয়ে বসবাস এখানে। সব মিলিয়ে ওই এলাকায় বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এলাকায় মোট বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। ডিএসপি কারখানা তৈরির সময় থেকেই সেখানে বসবাসের শুরু। একই সময়ে যৌনকর্মীদেরও আসা শুরু হয়।

Advertisement

এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রথমে যৌনকর্মীদের মাত্র তিনটি পরিবার ছিল। ধীরে-ধীরে বাড়তে বাড়তে এখন তা প্রায় আটশো হয়েছে। যৌনপল্লির পুরোটাই রয়েছে ডিএসপির জমিতে। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছেদের নোটিস পেয়ে আতঙ্কিত যৌনকর্মীরা। তাঁদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে কী করা হবে, তা নিয়ে বৈঠকও করা হয়েছে। অরাজনৈতিক সেই বৈঠকে দুর্বারের পদাধিকারীদের পাশাপাশি ছিলেন তৃণমূল নেতা ধর্মেন্দ্র, কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তরুণ রায়েরা। যৌনকর্মীরা জানান, অস্তিত্ব রক্ষায় তাঁরা সব রকম ভাবে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। যৌনকর্মীদের পাশে থাকা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে নীলকমল মিশ্র জানান, দুর্বারের কলকাতার প্রতিনিধিরাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কাদা রোডের যৌনপল্লি বাঁচাতে এখানকার যৌনকর্মীরা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যৌনকর্মীর বক্তব্য, “বাকিদের থেকে আমাদের সমস্যাটি আরও জটিল। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা যদি করাও হয়, আমাদের রোজগারের কী হবে? আমরা খাব কী? পরিবার নিয়ে ভেসে যাব আমরা। এখানে কোনও রকমে পেশার জোরে আমাদের রুটি-রুজির জোগাড় হয়ে যায়।”

কংগ্রেস নেতা তরুণ বলেন, “এখানকার বাকি বাসিন্দাদের পাশাপাশি যৌনকর্মীদের জন্যও উপযুক্ত ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করতে হবে। তার আগে কোনও ভাবেই কাউকে সরানো যাবে না।” তৃণমূল নেতা ধর্মেন্দ্র বলেন, “কারখানার সম্প্রসারণ হোক, সেটা সবাই চান। কিন্তু তার আগে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার কথা জানতে হবে। সেই অনুযায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।”

যদিও, ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুনানির প্রক্রিয়া চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement