প্রতীকী ছবি।
জেলায় এ বার অর্ধেকেরই বেশি বুথকে স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের তুলনায় এই সংখ্যাটা অনেকটাই বেড়েছে। তবে তার পরেও বিরোধীদের দাবি, জেলার সব বুথকেই স্পর্শকাতর ঘোষণা করতে হবে। পাশাপাশি, নিয়ম অনুযায়ী বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট বুথের সংখ্যা, ৩,০৬৪টি। এর মধ্যে ৬১৮টি বুথে হাজারেরও বেশি ভোটার রয়েছেন। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘প্রাথমিক হিসেবের নিরিখে এ পর্যন্ত জেলায় ৮২৭টি স্পর্শকাতর ও ৭৮৩টি অতি স্পর্শকাতর বুথকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ১,৬১০টি বুথকে এ বার বাড়তি নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।’’ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, গত লোকসভা ভোটে সব মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথ ছিল।
ভোট-প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ কমিশনারেট। কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন সমস্যা তৈরি করতে পারেন, এমন ৯৪২ জনের একটি নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এঁদের অনেককেই ডেকে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনের উপরে কড়া নজর রাখা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে, জেলায় এমন ৪৬৫ জন অপরাধীর নাম মিলেছে। এদের মধ্যে ২৭৫ জনের পরোয়ানা প্রায় ছ’মাস আগেই অতিক্রম করেছে। প্রত্যেককেই ধরার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ কমিশনার জানান, জেলায় ভিন্-রাজ্য ও ভিন্-জেলার সঙ্গে একাধিক সীমানা রয়েছে। সীমানা ঘেঁষা রাস্তা ও নদীপথে প্রায় ৪৩টি ‘নাকা পয়েন্ট’ করা হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন সীমানা পেরিয়ে ‘দুষ্কৃতী’রা যাতে জেলায় না ঢুকতে পারে, তাই এই ব্যবস্থা। লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সীমানাবর্তী এলাকা জামতাড়া, মিহিজাম নলা, চিত্রা ধানবাদ, কুমারডুবি, নিরষার ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’দের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের উপরে কড়া নজরদারি চালানোর জন্য ঝাড়খণ্ড পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে। ধারাবাহিক বৈঠক করে বিষয়টির উপরে নজর রাখার কথা জানিয়েছেন সুকেশকুমার জৈন। এ ছাড়া, এ পর্যন্ত ৩২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৮টি তাজা বোমা ও বেশ কয়েক রাউন্ড তাজা কার্তুজ বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
তবে পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য নেতা তাপস রায় বলেন, ‘‘জেলায় এমন কোনও বুথ নেই, যেখানে তৃণমূলের তাণ্ডব চালানোর আশঙ্কা নেই। তাই আমরা চাই সব বুথকে এখনই স্পর্শকাতর ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।’’ সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা আগেই সর্বদল বৈঠকে প্রত্যেক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার দাবি তুলেছি। তাহলেই একমাত্র সাধারণ ভোটারেরা বুথ পর্যন্ত যেতে পারবেন।’’ যদিও বিরোধীদের এই দাবিকে আমল দিতে চাননি তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর ভি শিবদাসন। তাঁর কথায়, ‘‘হার হবে বুঝে গিয়ে বিরোধীরা এখন এ সব অযৌক্তিক দাবি করছেন।’’
বিরোধীদের এই দাবি নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি পুলিশকর্তারা।