Bardhaman

না ঘুমিয়ে ঘরে আল্পনা দিতেন, ‘ভূত ছাড়াতে’ মাথার চুল কেটে নেওয়া হল বধূর, বন্দি মন্দিরে

আউশগ্রামের বছর পঁচিশের বধূ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। তাঁর ঘুম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অস্থির ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এই উপসর্গ দেখে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয় তাঁকে ‘ভূতে ধরেছে।’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৬
Share:

বধূকে মন্দিরে আটকে রেখে চলে ঝাড়ফুঁক। —নিজস্ব চিত্র।

নব্বইয়ের দশকে বর্ধমানকে বাম সরকার ঘোষণা করেছিল পূর্ণ স্বাক্ষর জেলা। তারপর অজয়, দামোদর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে ১২ বছর হল। একুশ শতকের দুই দশক পেরিয়ে এসেও কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি পেল না জেলা। আউশগ্রামের বধূকে ভূতে পেয়েছে, এই ধুয়ো তুলে করা হল ঝাড়ফুঁক। কেটে নেওয়া হল তাঁর মাথার চুলের খানিকটা অংশ। আটকে রাখা হল মন্দিরে।

Advertisement

আউশগ্রামের কয়রাপুর গ্রামের তুড়িপাড়ার বাসিন্দা বছর পঁচিশের ওই বধূ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। তাঁর ঘুম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অস্থির ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এই উপসর্গ দেখে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয় তাঁকে ‘ভূতে ধরেছে’। আবার ‘দেবতার ভর’ও হতে পারে। মানসিক সমস্যায় ভোগা বধূকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে গিয়ে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করেন পাড়ার এক কালীমন্দিরের পূজারীর সঙ্গে। ওই মন্দিরের দুই পূজারী এসে বলেন, তাঁকে ‘ভূতে পেয়েছে।’ শনিবার কালীমন্দিরে নিয়ে গিয়ে বধূর ঝাড়ফুঁক শুরু হয়। শ্বশুরের দাবি, ‘‘কয়েক দিন ধরে ছোট বৌমা ছটফট করছিল। রাতে উঠে বাড়িতে আল্পনা দিচ্ছিল। আমাদের সন্দেহ কেউ তার শরীরে কোনও আত্মা ঢুকিয়ে দিয়েছে।’’ যুবতীর এক আত্মীয় মনোজ তুড়ির কথায়, ‘‘এই মন্দিরে দেবী খুব জাগ্রত বলে মনে করে পরিবারের লোকজন। তাই পূজারীর নির্দেশ মেনেই যা করার করেছে।’’ তবে রোগীকে কোনও চিকিৎসক বা হাসপাতালের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন না তাঁরা।

বস্তুত, ‘ভূত ছাড়াতে’ কালীমন্দিরে নিয়ে গিয়ে মন্ত্র পড়া হয়। শুধু তাই নয়, পুরোহিতের নিদানে ‘ভূতে পাওয়া’ বধূর মাথার চুল কেটে নিয়ে যাওয়া হয় নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য। চুল নিয়ে যাওয়া থেকে ভাসিয়ে দিয়ে ফিরে আসার সময় পর্যন্ত বধূকে মন্দিরে আটকে রাখা হয়।

Advertisement

এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজ্ঞান সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের শহর বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই মহিলার কোনও মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে বিজ্ঞান মঞ্চ এই বিষয়ে পদক্ষেপ করবে ওই গ্রামে গিয়ে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement