বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আরপিএফ। —নিজস্ব চিত্র।
রেলশহর চিত্তরঞ্জনে শুরু হল অবৈধ নির্মাণ গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান। রেলের তরফে বুলডোজ়ার গড়াতেই প্রতিবাদে সরব হন স্থানীয়রা। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। রেলের কাজে বাধা দেওয়ায় এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে জানাল আরপিএফ।
আসানসোলের চিত্তরঞ্জনে দীর্ঘ দিন ধরে তৈরি একাধিক অবৈধ বাড়ি ভাঙা শুরু করেছে রেল প্রশাসন। সোমবার ওই নির্মাণ ভাঙতে আনা হয় বুলডোজ়ার। সকাল থেকেই ফতেপুর এলাকার ৫৬ এবং ৫৭ নম্বর রাস্তার ধারে ওই উচ্ছেদ অভিযানের সময় তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বাধা দিতে এগিয়ে আসতে দেখা যায় চিত্তরঞ্জন শহরের তৃণমূল নেতা দেবু ঘোষ-সহ সেখানকার বাসিন্দাদের। তাঁরা রাস্তায় শুয়ে উচ্ছেদ আটকানোর চেষ্টা করেন। যদিও আরপিএফ বাহিনী এসে তাঁদের উচ্ছেদস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন চিত্তরঞ্জন রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিক আইজি বীরেন্দ্র কুমার। রাস্তা থেকে দেবুকে পাঁজাকোলা করে তাদের গাড়িতে তোলে আরপিএফ। তখন প্রতিরোধও শেষ হয়ে যায়। বুলডোজ়ারের আঘাতে মাটিতে মিশে যেতে থাকে ইটের পাঁচিল আর টিনের ছাউনি দেওয়া একের পর এক বাড়ি। চোখের সামনে আবাস ভাঙতে দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন বসবাসকারী মানুষজন। অনেকে বিপদের আঁচ পেয়ে আগেই ঘর থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন। যদিও বহু ঘরের সঙ্গে জিনিসপত্রও বুলডোজ়ারের চাপে মাটির তলায় মিশে গিয়েছে।
বস্তুত, চিত্তরঞ্জনের ওই জায়গায় শহরের বিভিন্ন বাজারে ব্যবসা করা সব্জি ব্যবসায়ী, ফুচকাওয়ালা থেকে বাড়ি-বাড়ি কাজ করা পরিচারিকারা পরিবার নিয়ে বাস করেন। তাঁদের ছেলেমেয়েরা শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করে। এদের কেউ মাধ্যমিক, কেউ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তীব্র শীতের দিনে তাঁরা কোথায় যাবেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। এই ভাঙচুর নিয়ে আরপিএফের আইজি বীরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘অনেক আগে নোটিস জারি করা সত্ত্বেও বেআইনি ভাবে চিত্তরঞ্জনে তৈরি হওয়া এই অবৈধ নির্মাণ থেকে কেউ বেরোননি। কেউ সরতে না চাওয়ায় এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, মোট ৫৭টি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, ওই বাড়িগুলির জন্য শহরের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সংরক্ষিত শহরে কোনও অবৈধ নির্মাণ রাখা হবে না বলে যে সিদ্ধান্ত রেল নিয়েছে, তাতে দোকান থেকে শুরু করে কোনও বাড়ি আর চিত্তরঞ্জনে থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। আপাতত হিন্দুস্তান কেবলসে্র পরিত্যক্ত আবাসনে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ঘরছাড়াদের।