Ethora CPIM Leader murder

স্মরণে তিন খুন, জোট নিয়ে সংশয়ী এথোড়া

সাড়ে পাঁচ দশক আগের ওই বিকেলে হাই স্কুলের মাঠে ছাত্র পরিষদের কর্মী-বৈঠক চলছিল। হঠাৎ একদল সশস্ত্র বহিরাগত সেখানে হামলা চালায়।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

সালানপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ০৮:১১
Share:

এখানেই খুন হয়েছিলেন ভবানীপ্রসাদ শর্মা (বাঁ দিকে) ও এথোড়া হাই স্কুলের প্রাধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ সিংহ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

তিন কামরার ছোট একতলা দালানবাড়ি। দালানের দক্ষিণ প্রান্তে আগাছায় ভরা এক ফালি ফাঁকা জমি। ঝোপের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে ফুট পাঁচেকের একটি শহিদ বেদি। লেখা রয়েছে ‘শহীদ ময়দান, ভবানী স্মরণে’। ঘরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বেদির দিকে তাকিয়ে ছিলেন দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। প্রিয় বন্ধুর নৃশংস ভাবে খুন এখনও মেনে নিতে পারেননি তিনি। ঘটনা মনে পড়লে তাঁর মতোই এখনও চোখে জল আসে গ্রামের অনেক প্রবীণের।

Advertisement

পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরের এথোড়া গ্রামে যে কোনও নির্বাচন এলেই ১৯৬৯ সালের ৫ জুলাইয়ের ওই ঘটনা বাসিন্দাদের মুখে ফেরে। জানা যায়, সাড়ে পাঁচ দশক আগের ওই বিকেলে হাই স্কুলের মাঠে ছাত্র পরিষদের কর্মী-বৈঠক চলছিল। হঠাৎ একদল সশস্ত্র বহিরাগত সেখানে হামলা চালায়। এলাকার প্রবীণদের অনেকের অভিযোগ, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় কয়েক জন সিপিএম সমর্থক। দুষ্কৃতীদের ছুরির কোপে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ছাত্র পরিষদ নেতা ভবানীপ্রসাদ শর্মার। পাল্টা এথোড়া হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, এলাকায় সিপিএম কর্মী বলে পরিচিত ব্রজেন্দ্রনাথ তপাদারকে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। তাতেও অশান্তি থামেনি। গ্রামের কংগ্রেস কর্মী বলে পরিচিত, এথোড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ সিংহের আবাসনে আক্রমণ হয়। পরিবারের সামনেই প্রধান শিক্ষককে কুপিয়ে খুন করা হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিন খুনে রক্তাক্ত হয় গ্রাম।

গ্রামে এখনও বাস করেন ভবানীপ্রসাদের ভাই আনন্দগোপাল শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘সেই মর্মান্তিক ঘটনা ভুলতে চেয়েও পারি না। দাদা জ্বর গায়ে হামলা থামাতে গিয়ে খুন হয়।’’ সত্যেন্দ্রনাথের ছেলে সোমনাথ সিংহ বলেন, ‘‘চোখের সামনে বাবা খুন হয়ে গেলেন। দুষ্কৃতীদের উল্লাস আজও ভুলিনি।’’ লোকসভা ভোটে এ বার বাম-কংগ্রেস পরস্পরের সমর্থনে লড়ছেন। দু’পক্ষের সমর্থকেরা গ্রামে এসে বাম প্রার্থীর সমর্থনে ভোট চাইছেন। বন্ধুকে বাঁচাতে সে দিন ছুটে গিয়েও শেষরক্ষা করে পারেননি প্রতিবেশী দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সমর্থক। কিন্তু গ্রামের সেই ঘটনা মনে রেখে সিপিএমকে ভোট দিতে পারব না।’’ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শঙ্করীপ্রসাদ শর্মাও বলেন, ‘‘কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাস করি। কিন্তু এখন সিপিএমকে সমর্থন করতে পারব না।’’

Advertisement

এলাকার প্রবীণেরা জানান, সে দিন ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামে এসেছিলেন ছাত্র পরিষদের তৎকালীন জেলা নেতা সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। দিনের পর দিন গ্রামে থেকে সতীর্থদের সাহস জুগিয়েছিলেন তিনি। এ বার আসানসোলে তিনি বিজেপির প্রার্থী। এ বিষয়ে সুরেন্দ্র বলেন, ‘‘ওই নৃশংস খুনের ঘটনা আজও ভুলিনি। যাঁদের মনে আছে, তাঁরা কখনও সিপিএমকে সমর্থন করবেন না।’’ তিনি জানান, অতীতের সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে এ বার পুরনো সতীর্থদের কাছে ভোট চাইবেন তিনি।

তবে প্রায় ৫৫ বছর আগের ঘটনা আজ আর মনে রাখতে চান না কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু বিজেপি। সব ভুলে আগে শত্রু বধ করতে হবে।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘অতীত ভুলে বর্তমানের সঙ্কট দূর করাই মূল লক্ষ্য এখন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement