রাস্তার কাজ চলায় রুদ্ধ প্রায় অর্ধেক পথ। নিজস্ব চিত্র
গত ছ’মাসে ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও বহু। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের গলসির নানা এলাকা কার্যত মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে, দাবি বাসিন্দাদের। পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু গলসি নয়, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ডানকুনি থেকে পানাগড় পর্যন্ত দুর্ঘটনা যেন একেবারে ওত পেতে বসে রয়েছে। এর একটা বড় কারণ রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। তার সঙ্গে বেপরোয়া গতি, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর উদাহরণও যথেষ্ট।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে রাজ্যের মধ্যেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। প্রত্যেক দিন গড়ে হাজার পাঁচেক ট্রাক, কয়েকশো বাস যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়ে। তার সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য ব্যক্তিগত গাড়ি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গলসি বাজারের উড়ালপুলে, চৌমাথা পারাজ মোড়, সীমনোড়ী ও খানো মোড়ে পরপর দুর্ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি বর্ধমানের মীরছোবায় মোটরভ্যানের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কায় গলসির তিন জনের মৃত্যু হয়। শনিবার রাতেও গলসির উড়ালপুলে ডাম্পার, ট্রাক ও গাড়ির ধাক্কায় বুদবুদের দু’জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দু’জন।
পুলিশ কর্তাদের দাবি, বার বার ঘটা দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে নেমে একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, রাস্তার উপরে বেপরোয়া ভাবে ট্রাক, লরি, ছোট মালবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে, রাস্তার অনেকটা অংশ আটকে সরু হয়ে যায় চলাচলের পথ। দ্বিতীয়ত, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলায় একাধিক স্থান সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিছু এলাকায় মূল রাস্তার বদলে সার্ভিস রোড দিয়ে যানবাহন যাতায়াত করছে। গলসি থানা এলাকায় দু’দিকের লেন তৈরির কাজ এখনও বহু বাকি। ফলে খুবই দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে এই এলাকা। এছাড়া বেপরোয়া গাড়ির গতি, মত্ত চালক তো রয়েছেই।
এ সব কারণের সঙ্গে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ দু’পক্ষই রাস্তায় কাজ চলাকালীন যান নিয়ন্ত্রণ ঠিকমতো করে না বলে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় রেডিয়াম স্টিকার ও দিক্-নির্দেশক আলো বসানো নেই। এগুলি থাকলে সুবিধা হয় চালক বা পথচারীদের। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে যে দুর্ঘটনাগুলি ঘটছে, তার বেশির ভাগই ঘটেছে কাজের জন্য রাস্তা সঙ্কুচিত হওয়ায়। আমরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৭ সালে রাস্তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। একাধিক বার সমীক্ষা করা হয়েছে। ব্লকস্তর থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে বেশ কয়েকবার। চারটি লেনে ১৪টা আন্ডারপাস ছিল। এখন ছ’লেন হচ্ছে। চারটে আন্ডারপাসের বদলে ২৭টা করা হচ্ছে। এছাড়া পাঁচটা উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। ফলে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শেষ করতে আরও এক দু’বছর সময় লাগতে পারে। জাতীয় সড়কের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (দুর্গাপুর) স্বপন মালিক বলেন, ‘‘কাজ করার সময় যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। তার পরেও কোথাও খামতি থাকলে আমরা পদক্ষেপ করব।’’